সংবাদ শিরোনামঃ

বিদ্যুৎ : কোন সুখবর নেই লোডশেডিং তীব্রতর হবে ** জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যার নেপথ্য খলনায়ক কে? ** জামায়াত নেতৃবৃন্দ যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত নন ** কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে আ’লীগ সরকারের কোরআন বিরোধী নারী নীতি ** বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্বপ্ন প্রলম্বিত হোক ** পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করার নায়ক ডেভিস ইস্যুতে পাক জনমত ও আদালতের চাপে সরকার ** ভূমিকম্প আর সুনামির পর পরমাণু আতঙ্কে জাপান ** কোরআন বিরোধী নারীনীতির অনুমোদনের পর সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ** আশির দশক ও কবি মতিউর রহমান মল্লিক **

ঢাকা শুক্রবার ০৪ চৈত্র ১৪১৭, ১২ রবিউস সানি ১৪৩২, ১৮ মার্চ ২০১১

।। মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ।।
ফির’আউনের যাদুকরদের প্রার্থনা : হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তৎকালীন ফিরআউন দ্বিতীয় রেমসীর-এর পুত্র মিনফাতাহ যার রাজত্ব খৃস্টপূর্ব ১২১৫ থেকে ১২৩০-এর নিকট দ্বীনের দাওয়াত পেশ করলে, সে হযরত মূসা আ.-এর নিকট তাঁর দাবীর স্বপক্ষে প্রমাণ দেখাতে বলল। হযরত মূসা আ. আপন লাঠি মাটিতে ফেললেন। সঙ্গে সঙ্গে তা এক অজগরে পরিণত হল। ফিরআউনের পরিষদবর্গ বলল, এ তো এক সুদক্ষ যাদুকর। একে প্রতিহত করার জন্য সারাদেশ থেকে বড় বড় যাদুকরদের একত্র করা হোক।

মিসরীয় কিবতীদের বিশেষ এক উৎসবের দিন আলোকদীপ্ত পূর্বাহ্নে প্রায় পনের হজার বিখ্যাত যাদুকর একত্র করা হল। যাদুকরেরা তাদের রজ্জু ও লাঠি নিক্ষেপ করে এক বিশাল ময়দান ভরে ফেলল। যাদুকরগণ দর্শকদের দৃষ্টি বিভ্রম ঘটিয়ে দেওয়ায় সকলের মনে হতে লাগল। এগুলো ঘন ঘন কাঁপছে। এ অবস্থা দেখে সকলেই আতংকিত হয়ে গেল। হযরত মূসা আ. আল্লাহ তা’আলার হুকুমে তাঁর লাটি নিক্ষেপ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে তা যাদুকরদের লাঠি ও রজ্জুগুলি গ্রাস করে ফেলল। এ দৃশ্য দেখে যাদুকরদের নিশ্চিত বিশ্বাস হল যে, হযরেত মূসা আ. কোনো যাদুকর নন; তিনি আল্লাহ পাকের প্রেরিত রাসূল। তারা তখন সিজদায় লুটিয়ে পড়ল এবং বলল আমরা মূসা ও হারুনের প্রতিপালক আল্লাহ রাববুল আলামীনের প্রতি ঈমান আনলাম। ফিরআউন বলল, এতো এক চক্রান্ত; আমি তোমাদের হস্তপদ বিপরীত দিক থেকে কর্তন করব এবং তোমাদের সকলকে শূলীতে চড়াব। তারা বললেন, আমাদের নিকট আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শন আসার পর আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। ফিরআউন তাদের সকলকে শূলীতে  চড়িয়ে শহীদ করে দিল। পূর্বাহ্নে যারা যাদুকর ছিলেন অপরাহ্নে তারা শহাদাত লাভ করেলেন। তারা শাহাদতের অমিয় সুধা পান করার পূর্বে আল্লাহ পাকের মহান দরবারে বিনয়াবনত হয়ে প্রার্থনা করেছিলেন, ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং আপনার নিকট আত্মসমর্পণকারীরূপে আমাদের মৃত্যু দিন।’’-আরাফ:১২৬

হযরত মূসা আ.-এর কওমের দুআ : হযরত মূসা আ.-এর যুগের ফিরআউন ছিল একজন উদ্ধত ও স্বৈরাচারী বাদশাহ। তার ও তার পরিষদবর্গের নির্যাতনের ভয়ে অনেকেই হযরত মূসা আ.- এর প্রতি ঈমান আনেনি। বনী ঈসরাইলের যারা হযরত মূসা আ.- এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তিনি তাদের সকলকে বললেন, হে আমার কওম, তোমরা যদি মুসলিম হয়ে থাক তবে তোমরা শুধু আল্লাহরই উপর নির্ভর কর। তখন তারা আল্লাহ পাকের নিকট প্রার্থনা করলেন।
‘‘আমরা সকলে একমাত্র আল্লাহর উপর নির্ভর করলাম। হে আমাদের প্রাতিপালক, আমাদেরকে অপরাধী সাম্প্রদায়ের উৎপীড়নের পাত্র করবেন না এবং আমাদেরকে আপনার অনুগ্রহে কাফির সম্প্রদায় থেকে রক্ষা করুন।’’  -ইউনুস ৮৫-৮৬

আল্লাহ পাক তাদের দুআ কবুল করেছিলেন এবং তাদেরকে ফিরআউনের নির্যাতন থেকে রক্ষা করেছিলেন। তারা সদলবল মিসর থেকে লোহিত সাগর অতিক্রম করে পূর্ব পার্শ্বস্থ সিনাই উপত্যকায় চলে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন।
ফিরআউনের গোষ্ঠীর একজন মুমিনের সর্বশেষ দুআ : ফিরআউনের এক চাচাতো ভাই হযরত মূসা আ.-এর প্রতি ঈমান এনেছিলেন। তিনি তাঁর ঈমান গ্রহণের বিষয়টি গোপন রাখেন। ফিরআউন একদিন দম্ভভরে বলল, আমি মূসাকে হত্যা করব। কারণ সে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। ফিরআউনের এই জ্ঞাতি ভাই তাকে বললেন, তোমরা কি একজন ব্যক্তিকে শুধু এ জন্য হত্যা করবে যে, সে বলে, আমার প্রতিপালক একমাত্র আল্লাহ। সে তো প্রতিপালকের নিকট থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ তোমাদের কাছে এসেছে। আজ কর্তৃত্ব তোমাদের; দেশে তোমরাই প্রবল, কিন্তু আমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি এসে পড়লে কে আমাদেরকে সাহায্য করবে? হে আমার সম্প্রদায়, আমি তোমাদের জন্য কওমে নূহ, কওমে আদ, সামূদ ও তাদের পরবর্তীদের শাস্তির অনুরূপ দুর্দিনের আশা করছি।
মুমিন ব্যক্তিটি আরও বললেন, হে আমার সম্প্রদায়, এই পার্থিব জীবন তো অস্থায়ী উপভোগের বস্ত্ত এবং পরকালই চিরস্থায়ী আবাস। অবশেষে এ মুমিন কিবতী তাঁর ঈমান গ্রহণের কথা প্রকাশ করে বললেন, তোমরা আমাকে বলছ, আল্লাহকে অস্বীকার করতে এবং তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করাতে। পক্ষান্তরে আমি তোমাদের আহবান করছি ক্ষমাশীল, পরাক্রমাশালী আল্লাহর দিকে। বস্ত্তত আমাদের প্রত্যাবর্তন তো আল্লাহরই নিকট এবং সীমালঙ্ঘনকারীরাই জাহান্নামের আধিবাসী। আর আমি তোমাদেরকে যা বলছি, তোমরা তা অচিরেই স্মরণ করবে। তিনি সর্বশেষ দুআ করেন,
‘আমি আমার যাবতীয় বিষয় আল্লাহর নিকট অর্পণ করছি। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখেন।’-মুমিন ৪৪

তালুত ও তাঁর সঙ্গীদের প্রার্থনা : হযরত মূসা আ.-এর প্রায় সহস্রাধিক বৎসর পর জালুত নামক জনৈক অত্যাচারী শাসক বনী ইসরাঈলের উপর নিপীড়ন চালিয়ে তাদেরকে আপন আবাসভূমি থেকে বহিষ্কার করেছিল। সে সময় বনী ইসরাঈল তৎকালীন নবী হযরত শামবীল আ.-এর নিকট আবেদন করেছিল যে, তাদের জন্য যেন একজন রাজা নিযুক্ত করা হয়, যার নেতৃত্ব তারা জলুতের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে। আল্লাহ পাকের হুকুমে তাদের জন্য তালুত নামক একজন শক্তিশালী ও প্রজ্ঞাবান মহান ব্যক্তিকে রাজা নিযুক্ত করা হল। নির্ধারিত সময়ে তালূত গৈণ্যবাহিনী নিয়ে বের হলেন। বললেন, আল্লাহ তোমাদেরকে একটি নদী দ্বারা পরীক্ষা করবেন। তোমরা এ নদী থেকে পানি পান করবে না। একান্তভাবে কারও করতে হলে স্বল্প পরিমাণে করবে। মাত্র তিনশ তের জন ছাড়া সকলেই অধিক পরিমাণে পান করল। যারা অধিক পরিমাণে পান করল, তারা আর সম্মুখে অগ্রসর হতে পারল না। কিন্তু খাঁটি ঈমানদারগণ এতে সাহস হারালেন না। তারা বললেন, আল্লাহর হুকুমে অনেক ক্ষুদ্র দল বৃহৎ দলকে পরাভূত করেছে। সুতরাং আমরা আল্লাহ পাকের উপর নির্ভর করে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবই। তাঁরা প্রবল প্রতাপশালী জালুত ত তার বিশাল গৈণ্য বাহিনীর সম্মুখীন হয়ে আল্লাহ পাকের নিকট দুআ করলেন,
‘‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে ধৈর্য দান করুন, আমাদের পা অবিচলিত রাখুন এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।’’- বাকারা ২৫০ আল্লাহ পাকের সাহায্যে তাঁরা শক্তিধর জালূত বাহিনীর বিরুদ্ধে জয়ী হন।

পূর্বযুগের একজন মুমিনের দুআ : পূর্ববর্তী কোনো যুগে এক ব্যক্তির দুটি আঙুর বাগান ছিল। এ বাগান দুটি প্রচুর পরিমাণ ফল প্রদান করত। উদ্যানের চতুর্দিকে খেজুর গাছ, দুই বাগানের মধ্যখানে শস্যক্ষেত এবং ফাঁকে ফাঁকে নহর প্রবাহিত ছিল। সে একদিন তার এক দরিদ্র বন্ধুর সঙ্গে অহঙ্কার করে বলল, আমি তোমার থেকে শ্রেষ্ঠ। সে তার উদ্যান প্রবেশ করে আরও বলল, আমি মনে করি না যে, কখনও কিয়ামত সংঘটিত হবে এবং এ উদ্যান কোনো দিন ধ্বংস হবে। তার দরিদ্র বন্ধু ছিলেন মুমিন। তিনি বললেন, তুমি কি তাঁকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি্ করেছেন? কিন্তু আমি বলি, আল্লাহই আমার প্রতিপালক। আমি কাহাকেও আমার প্রতিপালকের সঙ্গে শরীক করি না। তুমি যখন তোমার উদ্যানে প্রবেশ করলে তখন কেন এ দুআ পড়লে না- এইসব আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে। আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোনো শক্তি নেই।’ সূরা কাহ্ফ ৩৯

অবশেষে তার ফল সম্পদ বিপর্যয়ে বেষ্টিত হল। তারা দ্রাক্ষা উদ্যান মাচানসহ ভূমিসাৎ হয়ে গেল। সে তাতে যা ব্যয় করেছিল তার জন্য আক্ষেপ করতে লাগল। তাকে সাহায্য করবার কেউ ছিল না এবং সে নিজেও প্রতিকারে সমর্থ হল না।
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ পাক কোনো বান্দার সম্পদে, সন্তানে বা পরিবার পরিজনের মধ্যে কোনো নেয়ামত দান করার পর সে যদি পাঠ করে
তবে আল্লাহ পাক এ নেয়ামত থেকে সর্বপ্রকার বিপদ আপদ সরিয়ে দেন। ৮. হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন, আবু হুরায়রা, আমি কি তোমাকে জান্নাতের এক ধন-ভান্ডারের দিকে পথ প্রদর্শন করবে না? তা হল, তুমি পাঠ করবে-
হযরত ওহাব ইবনে মুনাবিবহ রহ, তাঁর ঘরের দরজার উপর লিখে রেখেছিলেন।
কেউ তাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি সূরায়ে কাহাফের বর্ণিত আয়াতখানি পাঠ করেন।১০.

রানী বিলকীসের দুআ : হযরত সুলাইমান আ.-এর সাবা বংশীয় রানী বিলকীস বিনতে শারাহীল ইয়ামানের শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তিনি প্রভূত বিত্তবৈভবের মালিক ছিলেন। রানীর একটি বিশাল সিংহাসন ছিল, যা স্বর্ণ, রৌপ্য ও বিভিন্ন প্রকার মূল্যবান পাথর দ্বারা সুসজ্জিত ছিল। রানী ও তার সম্প্রদায় ছিল সূর্যপূজারী। হযরত সুলাইমান আ. রানীর নিকট এই মর্মে পত্র প্রেরণ করেছিলেন যে, সে যেন কুফর ও শিরক বর্জন করে ‘আল্লাহ এক’ বলে বিশ্বাস করে এবং ক্ষমতার অহমিকা পরিত্যাগ করে তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে তার নিকট উপস্থিত হয়। এদিকে হযরত সুলাইমান আ. দরবারের লোকদেরকে বলেন, হে পারিষদ বর্গ, ইয়েমেনের রানী আত্মসমর্পণ করে আমার নিকট আসার পূর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমার নিকট আসার পূর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমার নিকট নিয়ে আসতে পারবে? এক শক্তিশালী জ্বীন বলল, আপনার মজলিস শেষ হওয়ার পূর্বেই আমি তা আপনার নিকট এনে দিতে পারব। হযরত সুলাইমান আ.-এর একজন নিকটতম সাহাবী ও লেখক বললেন, আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনার নিকট নিয়ে আসতে পারব।

ইনি আসমানী কিতাবের জ্ঞানসম্পন্ন ছিলেন এবং তাঁর ইসমে আযমও জানা ছিল। মুহূর্তের মধ্যে সে সিংহাসন নিয়ে আসল।
রানী বিলকীস হযরত সুলাইমান আ.-এর দরবারে উপস্থিত হলেন। তিনি এখানে তার নিজ সিংহাসন দেখে বিস্মিত হলেন এবং এক আল্লাহর প্রতি নিজের ঈমান প্রকাশ করলেন। রানী হযরত সুলাইমানের আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ঐশ্বর্য ও অভূতপূর্ব ক্ষমতার প্রতাপ লক্ষ করে পাঠ করেছিলেন-
‘‘হে আমার প্রতিপালক, আমি তো নিজের প্রতি জুলুম করেছিলাম। আমি সুলাইমানের সঙ্গে জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহার নিকট আত্মসমর্পণ করছি।’’ -সূরা নামল : ৪৪

হযরত ঈসা আ.-এর হাওয়ারীদের দুআ : হযরত ঈসা আ. বনী ইসরাঈলের নিকট নবী হিসেবে আগমন করেন। তাদের অধিকাংশ তাঁর দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে। উপরন্ত তারা তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করল। তিনি তা উপলব্ধি করতে পেরে বললেন, আল্লাহর দিকে গমনে কে আমার সাহায্যকারী হবে? হযতর ঈসা আ-এর একান্ত অনুগত হাওয়ারীগণ বললেন, আমরাই আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আমরা আত্মসমর্পণকারী, আপনি এর সাক্ষী থাকুন। অতঃপর তারা কথাটিকে আরও সুদৃঢ় করার জন্য আল্লাহ পাকের নিকট প্রার্থনা করে বললেন,

হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি যা অবতীর্ণ করেছেন তাতে আমরা ঈমান এনেছি এবং আমরা এই রাসূলের অনুসরণ করেছি। সুতরাং আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্য প্রদানকারীদের তালিকাভূক্ত করুন। -সূরা আল-ইমরান ৫৩
আসহাবে কাহ্ফের দুআ : হযরত ঈসা আ.-এর কিছুকাল পর রোম সম্রাজ্যের অন্তর্গত তারাসূস শহরে এক স্বৈরাচারী শাসকের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই অত্যাচারী বাদশা সকল মানুষকে মূর্তিপূজার প্রতি আহবান করত এবং যে সকল মুমিন তার এহেন দুস্কর্মে সাড়া দিত না তাদেরকে সে হত্যা করত।

ঈমানদার সমাজের জন্য এটি এক গুরুতর সঙ্কটরূপে দেখা দিল। এ পরিস্থিতি দেখে একদল যুবক অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তাদের সংবাদ বাদশাহের সম্মুখে উপস্থিত হলে বাদশাহ তাদেরকে মূর্তিপূজা না করলে হত্যার হুমকি দিল। ঈমানদীপ্ত যুবকেরা বাদশাহর মুখোমুখি দন্ডায়মান হয়ে নিজেদের ঈমান প্রকাশ করে বলল, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অধিপতিই আমাদের রব। আমরা তাঁকে ছাড়া অন্যকে কক্ষনো প্রভু হিসাবে গ্রহণ করব না। অত্যাচারী শাসক তাদেরকে বলল, তোমরা অল্প বয়স্ক যুবক তোমাদেরকে নিজেদের সিদ্ধান্ত প্রকাশের জন্য আগামীকাল পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া হল। ঈমানদার যুবকের সংখ্যা ভয়ে রাতের বেলায় শহর ছেড়ে পলায়ন করল। ভোরের আলো ফুটতে আরম্ভ করলে তারা পাহাড়ের একটি গুহায় আত্মগোপন করল। তাদেরকেই আসহাবে কাহ্ফ বা গুহাবাসী বলা হয়। বাদশাহ ও তার সেনাবাহিনী তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেছিল, কিন্তু অত্যাচারী গোষ্ঠী গুহামুখে পৌঁছামাত্র ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল এবং গুহায় প্রবেশ করতে পারল না। বাদশাহ বলল, গুহার দরজা বন্ধ করে দাও। তাহলে তরা ক্ষুৎ পিপাসায় মারা যাবে।

মুহাম্মদ আলী আসসাবূনী, সাফওয়াতুত তাফাসীর, সূরা কাহ্ফ, পৃ.৩
মুমিন যুবকেরা গুহায় প্রবেশ করে আল্লাহ রাববুল আলামীনের মহান দরবারে প্রার্থনা করেছিলেন-
‘‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি নিজের কাছ থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করুন এবং আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনা ব্যবস্থা করুন।’’ -সূরা কাহ্ফ ১০
আল্লাহ তায়ালা তখন তাদেরকে গুহায় শাস্তির নিদ্রা দান করেছিলেন।

ফেরেশতাদের দুআ : ফেরেশতা আল্লাহ পাকের এক প্রকার সম্মানিত মাখলুক। আল্লাহ তায়ালা কোটি কোটি ফেরশতা সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে চারজনের একটি দল আল্লাহ পাকের আরশ বহন করে আছেন। আল বিদায়া, খ১, পৃ:৫৪
আর একদল ফেরেশতা আরশের চতুর্দিকে আরশ ঘিরে আছেন। এ উভয় দল আল্লাহ পাকের অত্যন্ত নৈকট্য প্রাপ্ত ফেরেশতা। তাঁরা সর্বদা আল্লাহ পাকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করেন। তাঁরা মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন,
‘‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী। অতএব, যারা তওবা করে ও আপনার পথ অবলম্বন করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।’’
‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি তাদেরকে দাখিল করুন স্থায়ী জান্নাতে, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাদেরকে দিয়েছেন এবং তাদের পিতামাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তাদেরকেও। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আপনি তাদেরকে শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। সেইদিন আপনি যাকে শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন তাকে তো অনুগ্রহই করলেন। এ-ই তো মহাসাফল্য।’ সূরা মুমিন ৭-৯

আ’রাফে অবস্থানকারীদের দুআ : পরকালের হিসাব নিকাশের পর জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করা হবে। জান্নাত ও জাহান্নাম ভিন্ন তৃতীয় একটি স্থান হল আ’রাফ। যাদের নেক আমল ও বদ আমল সমান সমান হবে তাদেরকে প্রাথমিকভাবে আ’রাফে রাখা হবে। আ’রাফের অধিবাসীগণ নিজেদের স্থান থেকে জান্নাতী ও জাহান্নামী উভয় দলকে দেখতে পাবে। তারা জান্নাত লাভের আকাঙ্ক্ষায় থাকবে। এক পর্যায়ে তাদেরকে জান্নাতে পৌছানো হবে। আ’রাফ থেকে তাদের দৃষ্টি যখন জাহান্নামীদের উপর পতিত হবে তখর তারা বীত সন্ত্রস্ত হয়ে বলবে, ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে জালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গী করবেন না।’’ (সূরা- আ’রাফ: ৪৭)

জান্নাত লাভের পর মুমিনদের দু’আ : মুমিনদের জন্য আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার হল জান্নাত। জান্নাত চিরস্থায়ী শান্তির নিবাস। পরকালের হিসাব-নিকাশ ও মহাবিচারের পর মুমিনদেরকে যখন চিরস্থায়ীভাবে শান্তি ও আনন্দের নিবাস জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে তখন তারা সেখানে প্রবেশ করেই পিছনের জীবনের সকল দুঃখ-কষ্ট, ঘাত-প্রতিঘাত ও সংগ্রাম সংকটের কথা ভুলে যাবে। তাদের অন্তর থেকে এ দু’আ উচ্চারিত হবে ‘‘সকল প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাদেরকে এর পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহ আমাদেরকে পথ না দেখালে আমরা কখনও পথ পেতাম না। আমাদের প্রতিপালকের রাসূলগণ তো সত্যবাণী এনেছিলেন।’’ (সূরা-আ’রাফ: ৪৩)
মুমিনগণ কখনও এ দু’আ করবে,  ‘‘সকল প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাদের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন এবং আমাদেরকে অধিকারী করেছেন এই ভূমির; আমরা জান্নাতে যেথায় ইচ্ছা বসবাস করব। সদাচারীদের পুরষ্কার কত উত্তম।’’ (সূরা-যুমার:৭৪)
তারা কখনও বলবে, ‘‘প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূরীভূত করেছেন, আমাদের প্রতিপালক তো ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।’-ফাতির ৩৪

জান্নাতে গিয়ে মুমিনগণ প্রতিটি নেয়ামত ভোগ করার পর প্রতি নিশ্বাসে নিশ্বাসে আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠত্ব, সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে। শ্রেষ্ঠত্ব, পবিত্রতা ও মহিমা ষোষণা করবে। শ্রেষ্ঠত্ব, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং প্রশংসা করে পরম তৃপ্তি লাভ করবে। জান্নাতে তাদের প্রধান ও শেষ কথা ও দুআ হবে-
‘‘প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য।’’-সূরা ইউনুস: ১০
‘আলহামদুলিল্লাহ’ শুধু জান্নাতীদের প্রধান ও শেষ দু’আই নয়, বরং দুনিয়াও সকল মুমিনের সর্ব অবস্থায় শ্রেষ্ঠ দুআ। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ দু’আ হল, আলহামদুলিল্লাহ। জালালুদ্দীন সুয়ূতী, আদদুররুল মানছুর, খ১, সূরা ফাতিহা, পৃ: ৩১ (ইবনে মাজা, বায়হাকী)

হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহপাক কোনো বান্দাকে কোনো নেয়ামত দেওয়ার পর সে যদি আলহামদুলিল্লাহ বলে, তবে সে যা গ্রহণ করল আল্লাহ পাক তাকে এর চেয়ে অধিক দান করুন। সহীহ মুসলিম, খ১, কিতাবুল তাহারাত, পৃ:১১৮
হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপর এক হাদীসে রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপর একখানি হাদীসে এরশাদ করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ মীযানকে ভরে দেয়। তাফসীরে কুরতুরী, খ১, সূরা ফাতিহা, পৃ: ৯২

হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত অপর এক হাদীসে রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘আমার কোনো উম্মতের হাতে যদি সমগ্র পৃথিবী উঠিয়ে দেওয়া হয় এবং সে আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করে, তবে আলহামদুলিল্লাহ মর্যাদা পৃথিবী ও এর সমগ্র বস্ত্ত থেকে উত্তম।’
ইমাম কুরতুবী বলেন, এর কারণ হল দুনিয়ার সকল নেয়ামত একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ’র সওয়াব কখনো খতম হবে না।

এ জন্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরার প্রথম আয়াতে এরশাদ করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ রাবিবল আলামীন। যেন আমার এ দু’আ করি-আমাদের জীবনের প্রতি দিবসে নিশীথে, প্রভাতে সন্ধ্যায়। শুধু তাই নয়, আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতের প্রতি রাকাতে আমরা যেন পাঠ করি, আলহামদুলিল্লাহহি রাবিবল আলামীন। সুতরাং সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার। তিনি চির প্রশংসিত। প্রারম্ভে, সমাপ্তিলগ্নে, ইহকালে, পরকালে। উপরে উল্লেখিত আল-কুরআনের দু’আ সম্পর্কে আলোচনা করা গেল। এখন আল-কুরআনে আম্বিয়া (আ)-এর দু’আ নিম্নে আলোচনা :

কুরআন মাজীদে ছাবিবশজন নবী-রাসূলের নাম সুস্পষ্ট ভাষায় এসেছে। নাম ছাড়া প্রসঙ্গ এসেছে আরো কয়েকজনের। আল্লাহ তাআলা এই নবী ও রাসূলদের মধ্যে কারো কথা সংক্ষিপ্ত ভাবে বলেছেন। আবার কারো বিবরণ বিস্তারিতভাবে দিয়েছেন। তন্মধ্যে অনেক নবী-রাসূলের কাহিনীতে রয়েছে, তার জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তে, বিভিন্ন স্বস্তি ও সংকটকালে, আনন্দ বা বেদনার সময় বিশেষ ভাষায় আল্লাহ পাকের নিকট মুনাজাত বা প্রার্থনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা তাদের সেসব মুনাজাত কবুল করেছেন। যেহেতু নবী-রাসূলগণ আল্লাহ পাকের মনোনীত ও নির্বাচিত মহান দূত ও প্রেরিত পুরুষ ছিলেন, তাই তারা যে পরিস্থিতিতে যে শব্দে বা ভাষায় দু’আ করেছেন, সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে আমরাও যদি হুবহু ওই শব্দে মহান আল্লাহ পাকের নিকট মুনাজাত করি, তবে আশা করা যায়, আমাদের দু’আ ও কবুল হবে। কুরআন মজীদে যে সব নবী-রাসূলের দু’আ উল্লেখিত হয়েছে, যুগ ও এর ধারাবাহিকতা  রক্ষা করে তাঁদের দু’আ উল্লেখিত হল।

হযরত আদম (আঃ)-এর দু’আ : আল্লাহ তাআলা হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও মা হাওয়াকে সৃষ্টি করার পর উভয়কে বললেন, তারা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা অবস্থান করতে পারবে এবং জান্নাতের সবকিছু থেকে উপকৃত হতে পারবে। একটি নির্দিষ্ট বৃক্ষের দিকে ইঙ্গিত করে বলে দেওয়া হল এই বৃক্ষের ফল আহার করবে না। এমনকি সেই বৃক্ষের কাছেও ঘেঁষবে না। কিন্তু শয়তানের কুমন্ত্রনায় তারা সেই নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ করে ফেলেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক তাদের কে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিলেন। পৃথিবীতে এসে তারা তাঁদের কৃত ভুলের কথা স্মরণ করে আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করতে থাকেন। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাদেরকে প্রার্থনাবাণী শিখিয়ে দেওয়া হল। তারা বললেন: ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করেছি, যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অর্ন্তভুক্ত হব’’ (সূরা-আরাফ ২৩)।

হযরত নূহ (আঃ)-এর দু’আ : হযরত নূহ আলাইহিস সালাম সাড়ে নয়’শ বছর যাবৎ তার কওমকে হেদায়েতের দিকে আহবান করতে থাকেন। কিন্তু তার কওম তার আহবান প্রত্যাখ্যান করত, তাঁকে ভীতি প্রদর্শন করত এবং তাঁকে লক্ষ করে বলত, এতো এক পাগল। তখন তিনি আল্লাহ পাককে আহবান করে বললেন, ‘‘হে আল্লাহ, আমি অসহায়। অতএব আপনি প্রতিবিধান করুন’’ (সূরা-কামার ১০)। অল্পকিছু লোক ব্যতীত অধিকাংশরা যখন তাঁকে প্রত্যাখ্যানই করতে থাকে তখন তিনি দু’আ করেন, ‘‘হে আমার প্রতিপালক, আমার সম্প্রদায় আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে। অতএব আমার ও তাদের মধ্যে কোন ফয়সালা করে দিন এবং আমাকে ও আমার সঙ্গী মুমিনদেরকে রক্ষা করুন’’ (সূরা-শুআরা ১১৭-১১৮)। তিনি পরিশেষে যখন তাদের ব্যপারে সম্পূর্ণ নিরাশ হলেন এবং বুঝতে, তাদের সীমালংঘনের শাস্তি অবধারিত তখনই তিনি তাদের দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে আল্লাহ পাকের নিকট প্রার্থনা করলেন, ‘‘হে আমার রব, আপনি পৃথিবীতে কোন কাফের গৃহবাসীকে রেহাই দিবেন না।  যদি আপনি তাদেরকে রেহাই দেন তবে তারা আপনার বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে এবং জন্ম দিতে থাকবে কেবল পাপাচারী, কাফের’’ (সূরা- নূহ ২৬-২৭)। তারপর হযরত নূহ (আঃ) মুমিনদের জন্য প্রর্থনা করে বলেন, ‘‘হে আমার পালনকর্তা, আপনি ক্ষমা করুন আমাকে, আমার পিতামাতাকে এবং যারা মুমিন হয়ে আমার গৃহে প্রবেশ করে তাদেরকে এবং সকল মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকে’’ (সূরা-নূহ ২৮)। সবশেষে তিনি কাফেরদের বেলায় কঠোরতর ভাষায় বদদু’আ করে বলেন, ‘‘ আর আপনি জালেমদের শুধু ধ্বংসই বৃদ্ধি করুন’’ (সূরা- নূহ ২৮)। হযরত নূহ (আঃ) মুমিনদের জন্য নেকদু’আ এবং কাফেরদের জন্য বদদু’আ করেছিলেন। তার উভয় প্রার্থনা কবুল হয়েছিল। আল্লাহ পাক তাঁকে একটি নৌযান তৈরি করার নির্দেশ দেন। তারপর সেই নৌযানে মুমিনদেরকে  নিয়ে আরোহণের হুকুম হল। তিনি তাই করলেন তিনি নৌযানে আরোহণের সময় বললেন, ‘‘ আল্লাহ পাকের নামেই এর গতি ও স্থিতি। নিশ্চই আমার রব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’’ (সূরা- হুদ ৪১)। হযরত নূহ (আঃ) সকল মুমিন মুসলমানকে নিয়ে নৌযানে আরোহণের পর আল্লাহ রাববুল আলামীন তাকে নিম্নোক্ত দুটি দুআ পাঠ করতে বললেন, ‘‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাদেরকে জালেম সম্প্রদায় থেকে উদ্ধার করেছেন’’ (সূরা- মুমিনূন ২৯)। ‘‘হে আমার রব, আমাকে এমনভাবে অবতরণ করিয়ে দিন যা হবে কল্যাণকর; আর আপনিই শ্রেষ্ঠ অবতরণকারী’’ (সূরা-মুমিনূন ২৯)।

হযরত হুদ (আঃ)-এর দু’আ : হযরত হুদ আলাইহিস সালাম অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে তাঁর কওমকে হেদায়াতের দিকে আহবান করেছিলেন। তাঁর কথায় ওরা কর্ণপাত না করায় তিনি তাদেরকে আল্লাহ পাকের শাস্তির ভয় দেখান। কিন্তু তাঁর সম্প্রদায় আরও ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে তাঁকে মিথ্যাবাদী বলল। তখন হযরত হুদ (আঃ) আল্লাহ পাকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে বলেন, ‘‘হে আমার রব, তারা আমাকে মিথ্যাবদী প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আপনি আমার সাহায্য করুন’’ (সূরা- মুমিনূন ৩৯)। সূরা মুমিনূনের ছাবিবশতম আয়াত থেকে বুঝা যায়, এই দু’আখানি  হযরত নূহ (আঃ) ও করেছিলেন।

হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রার্থনা : হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর অনেক গুলো দু’আ পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। তিনি নবুয়াতের দায়িত্ব পাওয়ার  সঙ্গে সঙ্গে তার পিতা ও কওমকে মূর্তিপূজা বর্জন  করে এক আল্লাহর ইবাদত করতে বলেন। তিনি এক পর্যায়ে বলেন, তোমরা যেগুলোর পূজা করো এগুলো আমার শত্রু। জগৎগৃহের প্রতিপালক একমাত্র আল্লাহ তাআলাই আমার প্রভু। যিনি আমাকে সঠিক পথের সন্ধান দেন। আমাকে আহার্য এবং পানীয় দেন এবং আমি অসুস্থ হলে রোগমুক্ত করেন। যিনি আমাকে মৃত্যু দেবেন এবং পুনরায় জীবিত করবেন। তারপর ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহ পাকের নিকট প্রার্থনা করেন- ‘‘ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে প্রজ্ঞা দান করুন এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং আমাকে পরবর্তীদের মধ্যে  যশস্বী করুন, আমাকে সুখময় জান্নাতের অধিবাসীদের অর্ন্তভুক্ত করুন’’ (সূরা- শুআরা ৮৩-৮৫)। হযরত ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহ পাকের নির্দেশে দুগ্ধপোষ্য পুত্র ইসমাঈল  ও স্ত্রী হাজেরাকে মক্কার অনাবাদী ঊষর মরুপ্রান্তরে রেখে নিজ আবাসস্থল ফিলিস্তিনে ফিরে আসছিলেন। তিনি চলতে চলতে এক পর্বতশীর্ষে আরোহণ করলেন, যেখান থেকে  স্ত্রী ও প্রিয় পুত্রধনকে দেখা যাচ্ছিল না। তখন কাবা শরীফের দিকে মুখ করে আল্লাহ পাকের নিকট প্রর্থনা করলেন, ‘‘ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী, আলজামিউস সহীহ, ১/৪৭৫ (কিতাবুল আম্বিয়া); মওলানা হিফুযুর রহমান সিউহারবী,  কাসাসুর কুরআন ১/২২৭;’’

‘‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমি আমার বংশধরদের কতককে  আপনার পবিত্র গৃহের সন্নিকটে অনাবাদ উপত্যকায় বসবাস  করালাম। হে আমাদের প্রতিপালক, তা এই জন্য যে, তারা যেন সালাত কায়েম করে। অতএব, আপনি কিছু লোকের অন্তর তাদের প্রতি অনুরাগী করে দিন এবং ফলাদি দ্বারা তাদের রিযিকের ব্যবস্থা করুন, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। হে আমাদের পালনকর্তা, নিশ্চয়ই আপনি জানেন আমরা যা গোপন করি এবং যা প্রকাশ করি। আল্লাহর নিকট আকাশ-ভূমির কোন কিছুই  গোপন নেই।’’ হযরত ইবরাহীম (আঃ) কিছুকাল মক্কা নগরীতে অবস্থান করেন। তিনি আল্লাহ পাকের একজন রাসূল হিসেবে নিজেকে ও  নিজের সন্তানকে মূর্তিপূজা থেকে মুক্ত রাখার এবং  তাদের আবাসস্থল পবিত্র মক্কা নগরীকে নিরাপদ শহরে পরিণত করার প্রার্থনা করে বলেন, ‘‘ হে আমার প্রতিপালক, এই নগরীকে শান্তিময় শহর করে দিন এবং আমাকে আমার পুত্রগণকে মূর্তিপূজা থেকে দূরে রাখুন। হে আমার প্রতিপালক, এই সকল মূ©à¦°à§à¦°à§à¦¤ তো বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। সুতরাং যে আমার দলভুক্ত, আর কেউ আমার অবাধ্য হলে আপনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’’ (সূরা-ইবরাহীম ৩৫-৩৬)। হযরত ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহ পাকের নিকট  নেক সন্তানের জন্য প্রার্থনা করে বলেন,‘‘ হে আমার রব, আমাকে এক সৎকর্মপরায়ণ সন্তান দান করুন’’। (সূরা- সাফফাত ১০০)। আল্লাহ পাক তার প্রার্থনা মঞ্জুর করে তাঁকে একজন স্থিরবুদ্ধি পুত্রের  সুসংবাদ দান করেন। এর অল্পদিন পর হযরত ইসমাঈল (আঃ) জন্ম লাভ করেন। হযরত ইসমাঈলের পর হযরত  ইবরাহীম (আঃ) এর প্রথম স্ত্রী হযরত সারা-এর গর্ভে ইসহাক নামক দ্বিতীয় পুত্র জন্মগ্রহণ করেন। হযরত ইবরাহীম (আঃ) একশ বছর বয়সে দুই পুত্রের পিতা হয়ে আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করেন। ‘‘কাসাসুল কুরআন ১/২৩১;’’

‘‘সকল প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য, যিনি আমাকে বার্ধক্যে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করেছেন। আমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রার্থনা শুনে থাকেন। হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ও আমার বংশধরদের থেকে সালাত কায়েমকারী করুন। হে আমাদের রব, আমার প্রার্থনা কবুল করুন। হে আমার প্রতিপালক, যেদিন হিসাব হবে সেদিন আমাকে আমার পিতামাতা কে এবং মুমিনদেরকে ক্ষমা করুন’’ (সূরা-ইবরাহীম ৩৯-৪১)। হযরত ইবরাহীম (আঃ) মক্কা নগরীর  নিরাপত্তা এবং  মক্কার মুমিন অধিবাসীদের জন্য জীবিকা প্রার্থনা করে আরও দু’আ করেন, ‘‘হে আমার প্রতিপালক, মক্কাকে নিরাপদ শহর করুন, আর এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী তাদেরকে ফলমুল থেকে জীবিকা প্রদান করুন’’ (সূরা-বাকারা ১২৬)। আল্লাহ পাক হযরত ইবরাহীম (আঃ) কে আল্লাহর গৃহ কাবা শরীফ নির্মাণ করার নির্দেশ দেন। হযরত ইবরাহীম (আঃ) পুত্র ইসমাঈলকে সঙ্গে নিয়ে আল্লাহর ঘর নির্মাণ করেন। ‘‘কাসাসুল কুরআন, ১/২৪২;’’

নির্মাণ কার্য সমাপ্ত করার পর পিতাপুত্র  দু’আ করেন, ‘‘ হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের এই কাজ গ্রহণ করুন। নিশ্চই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা। হে আমাদের প্রতিপালক আমাদের উভয় কে আপনার একান্ত অনুগত করুন এবং  আমাদের বংশধর থেকে আপনার এক অনুগত উম্মত করুন। আমাদেরকে ইবাদতের নিয়মপদ্ধতি দেখিয়ে দিন এবং  আমাদের তওবা কবুল করুন। নিশ্চই আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’’ (সূরা- বাকারা ১২৭-১২৮)। পবিত্র কুরআনে সূরায়ে মুমতাহিনায় রয়েছে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) তার কাফের ও মুশরিক  সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে বলেছেন তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা কর তাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনলে তোমাদের ও আমাদের মধ্যে  চিরকালের জন্য শত্রুতা- বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়ে রইল। তখন ইবরাহীম (আঃ) তার অনুসারীগণ আল্লাহ পাকের  নিকট সকাতর প্রার্থনায় বলেছেন , ‘‘হে আমাদের রব, আমরা তো আপনারই উপর নির্ভর করেছি, আপনারই অভিমুখী হয়েছি এবং প্রত্যাবর্তন তো আপনারই নিকট। হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি আমাদেরকে কাফেরদের জন্য পরীক্ষার পাত্র করবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চই আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’’ (সূরা- মুমতাহিনা ৪-৫)।
হযরত লুত (আঃ)-এর দু’আ : হযরত লুত (আঃ) হযরত ইবরাহীম (আঃ)- এর পরামর্শে দাওয়াত ও হেদায়েতের উদ্দেশ্যে মৃতসাগরের দক্ষিণ পাশের অঞ্চলে এসে অবস্থান গ্রহণ করেন। এখানে সাদুম ও আমুরা গোত্রদ্বয়ের বসতি ছিল। ‘‘ডক্টর শাওকী আবু খলীল, আতলাসুল কুরআন ৬১;’’

তিনি এখানে এসে দেখলেন, এখানকার লোকেরা এক প্রকার অতি কুৎসিত কুকর্মে লিপ্ত। তিনি সকলকে এ ধরনের অপকর্ম  থেকে বিরত থাকতে কঠোরভাবে সতর্ক করলেন। কিন্তু তারা তার কথায় বিন্দু মাত্র কর্ণপাত করল না: বরং তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রূপ করতে লাগল। হযরত লুত (আঃ) এই সংকট কালে দুটি দু’আ করেন। তিনি মুমিনদের জন্য প্রার্থনা করলেন, ‘‘হে আমার রব, আমাকে ও আমার পরিবার-পরিজনকে এহেন দুস্কর্ম থেকে রক্ষা করুন’’ (সূরা-শুআরা ১৬৯)। তার অপর দু’আটি হল, ‘‘হে আমার প্রতিপালক, বিপর্যয়সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের  বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করুন’’ (সূরা-আনকাবুত ৩০)। আল্লাহ পাক তার দু’আ কবুল করলেন। তাঁকে ও তার অনুসারীদেরকে রক্ষা করলেন এবং অপরাধীদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিলেন।

হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর মুনাজাত : মিসর-অধিপতির স্ত্রী হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। অল্প দিনের মধ্যেই এ কথা রাষ্ট্র হয়ে যায় যে, আযীযের স্ত্রী তার ক্রীতদাসের  প্রতি প্রেমাসক্ত হয়ে পড়েছে। আযীযের স্ত্রী এ দুর্নাম আপনোদনের জন্য মিসরের নারীদেরকে দাওয়াত করলেন মিসরের নারীগণ হযরত ইউসুফের রূপ-গরিমা  দেখে অভিভূত হয়ে গেল। সকলেই হযরত ইউসুফের প্রতি অনুরাগী হয়ে পড়ল এবং তাঁকে বলল, তুমি আযীযের স্ত্রীর অনুগত্য কর। ঈমানের এরূপ কঠিন পরীক্ষার মুহূর্তে হযরত ইউসুফ (আঃ) আল্লাহ পাকের মহান দরবারে দু’আ করলেন, ‘‘ হে আমার প্রতিপালক, এই নারীরা আমাকে যার প্রতি আহবান করেছে তা আপেক্ষা কারাগার আমার নিকট অধিক প্রিয়’’ (সূরা-ইউসুফ ৩৩)। আল্লাহ পাক হযরত ইউসুফের এই বিনীত প্রার্থনা কবুল করেছেন।

হযরত ইউসুফকে তাঁর ভাইরা কেনআনের কূপে ফেলে দিয়েছিল। আল্লাহ পাক তাকে কূপ থেকে উদ্ধার করে মিসর নিয়ে গেলেন। মিসরে এক মিথ্যা অপবাদে তাঁকে কারাগারে যেতে হয়। আল্লাহ তাআলা তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে মিসরের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী করে দিলেন। পিতা-মাতা ও আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দীর্ঘ দিন পর তার সাক্ষাৎ হল। তিনি ইহকালীন জীবনে সর্বদিক থেকে আল্লাহ পাকের রহমত ও নেয়ামত লাভ করার পর জীবনসায়াহ্নে এসে আল্লাহ পাকের নিকট নিবেদন করলেন, ‘‘কাসাসুল কুরআন ১/২৯৫

‘‘হে আমার রব, আপনি আমাকে রাজ্য দান করেছেন এবং স্বপ্ন ও অন্যান্য কথার ব্যাখ্যা শিক্ষা দিয়েছেন। হে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা, আপনিই ইহলোক ও পরলোকে আমার অভিভাবক। আপনি আমাকে মুসলিমহিসেবে মৃত্যু দিন এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করুন’’ (সূরা-ইউসূফ ১০১)।
হযরত শুয়াইব (আঃ)-এর প্রার্থনা : মাদাইয়ানবাসীর নিকট হযরত শুয়াইব আলাইহিস সালাম নবীরূপে প্রেরিত হয়েছিলেন। তিনি তার কওমকে বললেন, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর। তেমরা পরিমাপ ও ওজন ঠিকভাবে দিও। আল্লাহর প্রতি যারা ঈমান আনে, তাদেরকে আল্লাহর পথে বাধা দিও না। তখন তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক ও অতি দুরাচার নেতৃবর্গ বলল, হে শুয়াইব, তোমরা আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে না আসলে আমরা তোমাদের কে আমাদের জনপদ থেকে অবশ্যই বহিষ্কার করে দেব। তখন হযরত শুয়াইব আল্লাহ পাকের সাহায্য প্রার্থনা করে বললেন, ‘‘ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের অপরাধীদের মধ্যে ন্যায্যভাবে মীমাংসা করে দিন এবং আপনিই মীমাংসাকারীদের  মধ্যে শ্রেষ্ঠ’’ (সূরা- আরাফ ৮৯)।
আল্লাহ পাক তার দু’আ কবুল করে অপরাধীদের ধ্বংস করে দিলেন।

হযরত মূসা (আঃ)-এর দুআ : হযরত মূসা (আঃ)- একবার মিসরের এক পথ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে দেখতে পেলেন, জেনিক স্থানীয় ব্যক্তি একজন ইসরাঈলীর উপর জুলুম করছে। তিনি সে স্থানীয় ব্যক্তিকে প্রথমত জুলুম থেকে বিরত থাকতে বললেন, কিন্তু সে তার কথা অমান্য করল। তিনি তৎক্ষণাৎ এই অপরাধীকে হাত দিয়ে আঘাত করলেন। তাতে সে মারা গেল। হযরত মূসা (আঃ)-এর তাকে হত্যা করার ইচ্ছা ছিল না। তিনি সঙ্গে সঙ্গে লজ্জিত হলেন এবং বললেন,  নিশ্চয় এটি শয়তানের কাজ। তারপর তিনি ,আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, ‘‘হে প্রভু  আমি নিজের উপর জুলুম করেছি। অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন’’ (সূরা- কাসাস ১৬)। আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা করে দিলেন। তিনি তখন তওবা করে বললেন, ‘‘হে আমার প্রতিপালক, যেহেতু আপনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, আমি  কখনো অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না’’ (সূরা- কাসাস ১৭)।

হযরত মূসা আ. কতৃক জনৈক মিসরী কিবতীকে হত্যার সংবাদ দ্রুতবেগে জানাজানি হয়ে গেল। ফেরাউনের পরিষদবর্গ হযরত মূসা আ. কে হত্যা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে তাঁকে খুঁজতে শুরু করল। তিন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে সেখান থেকে বের হয়ে পড়লেন এবং আল্লাহর কাছে দু’আ করলেন, ‘‘হে আমার রব, আপনি জালেম সম্প্রদায় থেকে আমাকে রক্ষা করুন’’ (সূরা-কাসাস ২১)।
হযরত মূসা আ.  মিসর থেকে পালায়ন করে লোহিত সাগরের পূর্ববর্তী অঞ্চল মাদাইয়ানে চলে আসলেন। তার জন্য মাদাইয়ান সম্পূর্ণ নতুন জায়গা। পথ-ঘাট ও মানুষজন একেবারে অপরিচিত। তিনি মুসাফির, কপর্দকহীন। এমন অসহায় অবস্থায়  তিনি আল্লাহ পাকের মহান দরবারে বিনয়াবনত হয়ে প্রার্থনা করেন।

‘‘হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করবেন, আমি তারই কাঙ্গাল। আল্লাহ পাক তার দু’আ কবুল করলেন। আল্লাহ পাকের নবী হযরত শুয়াইবের গৃহে স্থায়ীভাবে তার থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন।
আলাহ তাআলা হযরত মূসা আ. কে নবুওয়াত দান  করে সর্বাগ্রে ফেরাউনের নিকট দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার জন্য বললেন। কারন সে সীমাহীন উদ্ধত নাফরমান ও স্বৈরাচারী। সে চরম পর্যায়ের দাম্ভিকতাবশত বনী ইসরাঈলকে গোলাম বানিয়ে রেখেছে। এত বড় জালেম ও অংহকারী বাদশাহর নিকট দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার মতো কঠিন দায়িত্ব পেয়ে হযরত মূসা আ. আল্লাহ পাকের নিকট প্রার্থনা করলেন, ‘‘হে আমার প্রতিপালক, আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন। আমার জিহবার জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে ’’ (সূরা-ত্বহা ২৫-২৮)।
হযরত মূসা আ. এর ভাষায় জড়তা ছিল। ফেরাউনের নিকট স্পষ্ট ভাষায় দাওয়াত পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে তখন তিনি তার মনের ও কথার শক্তি বৃদ্ধির জন্য একজন সহযোগী প্রার্থনা করে আল্লাহ পাকের নিকট দু’আ করলেন, ‘‘ আমার জন্য আমার স্বজনবর্গের মধ্যে থেকে একজন সাহায্যকারী স্থির করুন, আমার ভ্রাতা হারুনকে, তার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করুন এবং তাকে আমার কর্মে অংশীদার করুন। যাতে আমরা প্রচুর পরিমাণে আপনার  পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে পারি এবং আপনাকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করতে পারি। আপনি তো আমাদের সম্যক দ্রষ্টা’’ (সূরা-ত্বহা ২৯-৩৫)।
আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা আ.-এর উভয় দু’আই কবুল করেন।

হযরত মূসা আ. যখন আল্লাহ  পাকের পক্ষ থেকে বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়তের গ্রন্থ হিসেবে তাওরাত গ্রহণ করতে তুর পাহাড়ে গমন করলেন, তখন বনী ইসরাঈল গোষ্ঠী সামেরী নামক মুনাফিকের  পরামর্শে বাছুরপূজা শুরু করল। হযরত মূসা আ. তাওরাত নিয়ে তাদের নিকট পৌঁছার আগেই আল্লাহ পাক তাকে একথা জানিয়ে দেন। তিনি ক্রদ্ধ ক্ষুব্ধ হয়ে  এসে প্রথমেই তার স্থলাভিষিক্ত আপন ভাই হযরত হারুন আ. এর কেশাগ্র স্পর্শ করে টানতে শুরু করলেন। হযরত হারুন আলাইহিস সালাম বললেন, তাদেরকে আমি বাধা দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাকে হত্যা করতে উদ্যত  হয়েছে। সে কঠিন  মুহূর্তে আমি খুব অসহায়ত্ব বোধ  করেছি। সুতরাং আমার  সঙ্গে এমন কোন আচরণ করো না যার  ফলে শত্রুরা খুশি হয়। আর আমাকে জালেমদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করো না। হযরত মূসার ক্রোধ প্রশমিত হলে তিনি আল্লাহ পাকের নিকট দু’আ করলেন, ‘‘ হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ও আমার ভ্রাতাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে আপনার রহমতের মধ্যে দাখিল করুন। আর আপনিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু’’ (সূরা-আরাফ ১৫১)।
আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা আ. কে শরীয়াত হিসেবে তাওরাত দেওয়ার জন্য প্রথমে ত্রিশ দিন পরে আরও দশ দিন বৃদ্ধি করে মোট চল্লিশ দিন সিয়ামসহ ই’তেকাফের মতো একই স্থানে ধ্যানমগ্ন থাকতে বললেন। হযরত মূসা আ. শর্তসহ মেয়াদ পূর্ণ করে যখন নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলেন, তখন আল্লাহ পাক নূরের পর্দার অন্তরাল থেকে তার সঙ্গে কথা বললেন। হযরত মূসা আ. তখন আল্লাহ পাককে সরাসরি দেখার প্রার্থনা করে বলেছিলেন, ‘‘ হে আমার প্রতিপালক, আমাকে দর্শন দিন, আমি আপনাকে দেখব’’ (সূরা- আরাফ ১৪৩)।

আল্লাহ পাক হযরত মূসাকে বললেন, তুমি আমাকে ইহকালে কখনই দেখতে পাবেনা। তুমি বরং পাহাড়ের প্রতি লক্ষ্য কর। তা স্বস্থানে স্থির থাকলে আমাকে দেখতে পাবে। যখন আল্লাহ তাআলা পাহাড়ের উপর তার নূর প্রকাশ করলেন, তখন পাহাড় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলে, আর মূসা আ. সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন। মূসা আ. জ্ঞান ফিরে পেয়ে আল্লাহ পাকের  নিকট তওবা করে প্রার্থনা করলেন- ‘‘ হে আল্লাহ, আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আমি অনুতপ্ত হয়ে আপনার নিকট প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই প্রথম’’ (সূরা- আরাফ ১৪৩)।

বনী ইসরাঈল যখন হযরত মূসা আ.  এর নিকট আল্লাহ পাকের বাণী সরাসরি শোনার আবেদন করল, তখন হযরত মূসা আ. তাদের সত্তর জন নেতা নিয়ে তুর পাহাড়ে গমন করেন। আল্লাহ পাক হযরত মূসার সঙ্গে কথা বললেন এবং তারা তা শুনতে পেলো। তৎসত্ত্বেও তারা বলল, আমরা নিজেদের চোখে আল্লাহকে না দেখলে শুধু কথা শুনে বিশ্বাস করব না। তখন প্রচন্ড ভূকম্পনে তারা মুত্যুমুখে পতিত হল। এ মূহূর্তে মূসা আ. আল্লাহ পাকের নিকট নিবেদন করেন  আমাদের মধ্যে যারা নির্বোধ তাদের কৃতকর্মের কারণে কি আপনি আমাদেরকে ধ্বংস করে দেবেন? তারপর তিনি প্রার্থনা করেন, ‘‘ আপনিই তো আমাদের অভিভাবক সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করুন ও আমাদের প্রতি দয়া করুন। ক্ষমাশীলদের মধ্যে আপনিই শ্রেষ্ঠ’’ (সূরা-  আরাফ ১৫৫)।

তখন হযরত মূসা আ.- এর দু’আয় তারা সকলে পুনরায় জীবিত হল। হযরত মূসা আ. বনী ইসরাঈলদের  নিয়ে সিনাই মরুভূমিতে অবস্থানকালে তাদেরকে বললেন, পার্শ্ববর্তী আরীহা জনপদে তোমরা প্রবেশ কর। সেখানে অত্যাচারী শত্রুবাহীনের বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হও। আল্লাহ পাকের ওয়াদা রয়েছে- তোমাদের পিতৃভূমি পুনরায় তোমাদের অধিকারে আসবে। বনী ইসরাঈল অভদ্রোচিত ভাষায় বলল, হে মূসা আ. তুমি তোমার প্রভুকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে সেখানে গিয়ে যুদ্ধ কর। আমরা এখানেই রইলাম। হযরত মূসা আ. তখন আল্লাহ পাকের নিকট আরয করেন- ‘‘ হে আমার রব, আমার ও আমার ভ্রাতা ব্যতীত অপর কারও উপর আমার আধিপত্য নেই, সুতরাং আপনি আমাদের ও সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের মধ্যে ফায়সালা করে দিন’’ (সূরা-মায়িদা ২৫)।

হযরত দাউদ (আঃ)-এর প্রার্থনা : আল্লাহ তাআলা হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম এর প্রশংসায় বলেন, দাউদ আ. অতিশয় আল্লাহ অভিমুখী ছিলেন। পর্বতমালা ও বিহঙ্গকুল হযরত দাউদ আ. এর সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহ পাকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত। আল্লাহ তাআলা হযরত দাউদ আ.-এর রাজ্যকে সুদৃঢ় করেছিলেন এবং তাঁকে অনেক প্রজ্ঞা ও মীমাংসাকারী বাগ্নিতা দান করেছিলেন। হযরত দাউদ আ. ও তার পুত্র সুলাইমান আলাইহিস সালামকে আল্লাহ পাক বিভিন্ন বিষয়ে প্রভূত জ্ঞান দান করেছিলেন। তারা উভয়ে আল্লাহ পাকের নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে দু’আ করেন, ‘‘ সকল প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আমাদেরকে তাঁর বহু মুমিন  বান্দার উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন’’ (সূরা-নাম্ল ১৫)।

হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর দু’আ : হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম ছিলেন বিশাল রাজ্যের অধিপতি। তার রাজত্ব শুধু মানুষের উপরই সীমিত ছিল না; বরং জিন, পশু, পাখি, ও বাতাসের উপরও তার আধিপত্য ছিল। এই সব কিছু আল্লাহ পাকের হুকুমে হযরত সুলাইমানের নির্দেশের আনুগত ছিল। তার এত ব্যাপক ক্ষমতার কারণ ছিল, তিনি একবার আল্লাহ পাকের  নিকট প্রার্থনা করেছিলেন, ‘‘ হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে দান করুন এমন এক রাজ্য, যা আমার পর আর কারো হাসিল হবে না। নিশ্চয় আপনি পরম দাতা’’ (সূরা- সাদ ৩৫)।
আল্লাহ তাআলা তার এ দুআ কবুল করেছেন। তাঁকে এমন বিস্ময়কর রাজত্ব দান করা হয় যা তার আগে বা পরে দ্বিতীয় কাউকে দেওয়া হয়নি।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বলেছেন, গত রাতে জনৈক অবাধ্য জিন আমার নামাজ নষ্ট করার চেষ্টা করেছিল। তখন আল্লাহ তাআলা তার  উপর আমাকে ক্ষমতা প্রদান করলেন। আমি তাকে পাকড়াও  করে ইচ্ছা করলাম, তাকে মসজিদের খুঁটির সঙ্গে আবদ্ধ করে রাখি। যাতে তোমরা সকালে তাকে দেখতে পাও। কিন্তু তখনই আমার ভাই সুলাইমান আ.-এর দু’আ তিনি আল্লাহ পাকের নিকট আরয করেছিলাম হে আল্লাহ, আমাকে এমন এক রাজত্ব দান করুন যার অধিকারী আমি ছাড়া। আর কেউ হবেনা। এ কথা স্মরণ হওয়া মাত্র আমি তাকে ছেড়ে দেই। হযরত সুলাইমান আ. দীর্ঘদিন যাবৎ বিশাল রাজ্য পরিচালনা করেন। মানুষ, জিন, পশু, পাখি সকলেই তার হুকুমের অনুগত ছিল। তিন সকল পশু পাখির ভাষা বুঝতেন। তিান সুষ্ঠু বিচারকার্য পরিচালনায় অসাধারণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন। আল্লাহ পদও এই চতুর্মুখী ও সর্বব্যাপী অনুগ্রহ লাভ করে তিনি আল্লাহ পাকের শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা আদায় করে মোনাজাত করেন,

‘‘হে আমার প্রতিপালক, আমাকে সামর্থ্য দিন যতে আমি আপনার প্রাতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি আপনি যে অনুগ্রহ করেছেন তার জন্য এবং যাতে আমি সংকর্ম করতে পারি, যা আপনি পছন্দ করেন এবং আপনার অনুগ্রহে আমাকে আপনার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের শ্রেণীভুক্ত করুন। -সূরা নামল ১৯।’’
হযরত আইয়ুব আ.- এর দু’আ : হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম ঐশ্বর্য, প্রাচুর্য ও সন্তান-সন্ততির দিক থেকে অত্যন্ত সফল ও ভাগ্যবান ছিলেন। হঠাৎ করে শুরু হল তার ঈমানী পরীক্ষা। তার সহায়-সম্পদ, পরিবার-পরিজন, শরীর ও প্রাণ মহাসংকটের আবেষ্টনীতে পতিত হল। অর্থবিত্ত ধ্বংস হল, স্বজন পরিজনের মৃত্যু ঘটল এবং দেহ কঠিন রোগে আক্রান্ত হল এ ধরনের মহা দুর্দশায় আপতিত হয়েও তার কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই; বরং তিনি সবর ও ধৈর্যের সঙ্গে আল্লাহ পাকের নিকট শুধু অবস্থা পেশ করে বললেন, ‘‘শয়তান তো আমাকে যন্ত্রণা ও কষ্টে ফেলেছে।’’-সূরা সাদ ৪১

যেহেতু মন্দ কাজ কোনো না কোনোভাবে শয়তানের প্ররোচনার প্রতিফলন, তাই আইয়ুব আ. তার কষ্ট ও যন্ত্রণার জন্য শয়তানকে দায়ী করেছেন অথবা অসুস্থতার সময় শয়তান তার ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে চেষ্টা করলে তিনি মানসিক কষ্ট পান এবং আল্লাহ তাআলার নিকট এই দুআ করেন। তারপর হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম নিজের অবস্থা প্রকাশের জন্য অতি উচ্চাঙ্গের ও অলঙ্কারমন্ডিত বর্ণনা ভঙ্গি গ্রহণ করে প্রার্থনা করেন, ‘‘আমি দুঃখকষ্টে পড়েছি, আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’’ সূরা আম্বিয়া-৮৩।

আল্লাহ পাক হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালামের দু’আ কবুল করেন। তার যে বিত্তবৈভব ও সন্তান-সন্তুনি ধ্বংস হয়ে ছিল, আল্লাহ পাক তার দ্বিগুণ তাকে দান করেন। আর তার সুস্থতার জন্য একটি প্রস্রবণ প্রবাহিত করেন, যার সুশীতল পানিতে গোসল করে এবং পানি পান করে তিনি সুস্থ হন।
হযরত ইউনুস আ.-এর প্রার্থনা : হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম দীর্ঘদিন মানুষকে তাওহীদের দাওয়াত দিতে থাকেন। তার সম্প্রদায় সত্যের আহবানে কোনোরূপ কর্ণপাত করেনি; বরং অহমিকা ও ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে আল্লাহ পাকের নাফরমানীতে লিপ্ত থাকে। আর অতীত যুগের সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়ের মত সত্য দ্বীনের আহবানকারী পয়গম্বরের সঙ্গে ঠাট্টাতামাশা করতে থাকে। হযরত ইউনুস আ. আপন সম্প্রদায়ের লাগাতার শত্রুতা ও বিরোধিতায় খুবই দুঃখিত হন। এক পর্যায়ে তিনি তাদের প্রতি বদ দুআ করে তাদের কাছ থেকে অন্যত্র রওনা হন। তিনি নিজ অঞ্চল ইরাকের নিনাব থেকে বের হয়ে ফুরাত নদীর তীরে পৌছেন। এখানে এসে তিনি লোক বোঝাই জাহাজে আরোহণ করেন। নদীতে কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ ঝঞ্ঝায় জাহাজ নিমজ্জিত হওয়ার উপক্রম হয়। জাহাজের চালকগণ বললেন, মনে হয় নৌযানে কোনো পলাতক গোলাম রয়েছে। তাকে আমাদের পৃথক না করা হলে

আমাদের থেকে পৃথক না করা হলে আমাদের রক্ষা পাওয়া মুশকিল হবে। হযরত ইউনুস আ. ভাবলেন, ওহীর অপেক্ষা ব্যতীত নিনাব থেকে আমার চলে আসা আল্লাহ পাক পছন্দ করেননি। তিনি সকলকে বললেন, আমিই আমার মনিবের কাছ থেকে অনুমতি ব্যতীত পলায়ন করে চলে এসেছি। সুতরাং আমাকে নদীতে নিক্ষেপ করে দিন। কিন্তু কেউ তাঁকে ফেলতে সাহস করল না। শেষে লটারী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হল। লটারিতে তার নামই আসল। সঙ্গে সঙ্গে হযরত ইউনুস আ. নদীতে ঝাঁপ দিলেন। তখনই তাঁকে এক বিরাট মাছ গলাধঃকরণ করল। আল্লাহ পাক মাছকে হুকুম দিলেন, ইউনুস তোমার খাদ্য নয়; তোমার উদর তার কায়েদখানা মাত্র। হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম আল্লাহর অভিমুখে অথৈ জলরাশির গভীর অন্ধকার তলদেশে মাছের পেটের অন্ধকার হৃদয় বিগলিত আর্তনাদসহ দয়াময় পরম দয়ালু, সর্বশ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী ও একমাত্র আশ্রয়স্থল মহান রবের নিকট সকরুণ প্রার্থনা করেন।
‘‘আপনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই, আপনি পবিত্র , মহান। নিশ্চয়ই আমি নিজের প্রতি অত্যাচারী।’’- সূরা আম্বিয়া ৮৭
আল্লাহ হযরত ইউনুসের এই দরদভরা প্রার্থনা কবুল করেন। তিনি মাছকে হুকুম করেন, ইউনুস তোমার নিকট আমার আমানত, তাকে উগলে দাও। মাছ নদীর কিনারায় গিয়ে কিনারায় গিয়ে তাঁকে উগলে দিল। হযরত ইউনুস আ. আল্লাহ্ পাকর অনুগ্রহে কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা পান। এই দু’আ সম্পর্কে হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহপাকের একটি নাম হলে তিনি জওয়াব দেন যার দ্বারা প্রার্থনা করা হলে তিনি দান করেন। তা হল ইউনুছ ইবনে মাত্তা দুআ।
হযরত যাকারিয়া আ.-এর দু’আ : হযরত ঈসা আ.-এর মাতা হযরত মারাইয়াম আলাইহি সালাম কৈশোরকালে বাইতুল মুকাদ্দাসের একটি কুঠরিতে আল্লাহ পাকের ইবাদত বন্দেগী করতেন। তৎকালীন নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম ছিলেন হযরত মারইয়ামের খালু। তিনি যখন হযরত মারইয়ামের হুজরাতে প্রবেশ করতেন, তখনই তার নিকট বে-মওসুম ফল দেখতে পেতেন। এতে তিনি বিস্মিত অভিভূত হন। একদিন জিজ্ঞাসা করলেন, হে মারাইয়াম তোমার নিকট এসব ফল কোথা থেকে আসে? উত্তরে মারইয়াম বললেন, এগুলো আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে আসে। আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দিয়ে থাকেন।

হযরত জাকারিয়া আ. নিঃসন্তান ছিলেন। তখন  তার বয়স সাতাত্তর বছর। এবং তার স্ত্রী বন্ধ্যা। তিনি সন্তান হওয়ার ব্যাপারে নিরাশ ছিলেন। কিন্তু হযরত মারইয়ামের নিকট অকালে ফল দেখে তার হৃদয়ে উদ্দীপনা সৃষ্টি হল যে, যে মহান সত্তা অকালে ফল পঠাতে পারেন তিনি আমার প্রতিও দয়াপরবশ হয়ে আমাকে বার্ধক্যে সন্তান দান করতে পারেন। যে  সন্তান  আমার অবর্তমানে দ্বীনী দাওয়াতের খেদমত আঞ্জাম দেবে। তখন তিনি আল্লাহ পাকের নিকট সবিনয় নিবেদন করেন,
‘‘হে আমার প্রতিপালক, আমার অস্থিদুর্বল হয়ে গেছে, বার্ধক্যে আমার মস্তক শুভ্রোজ্জ্বল হয়েছে। হে আমার প্রতিপালক, আপনাকে আহবান করে আমি কখনও ব্যর্থকাম হইনি। আমি আশঙ্কা করছি আমার পর আমার স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে; আমার স্ত্রী বন্ধ্যা; সুতরাং আপনার নিকট থেকে আমাকে দান করুন উত্তরাধিকারী, যে আমার উত্তরাধিকারিত্ব করবে এবং উত্তরাধিকারীত্ব করবে ইয়াকুবের বংশের। হে আমার প্রতিপালক, তাকে করুন সন্তোষভাজন।’’-সূরা মারইয়াম-৪-৬

হযরত যাকারিয়ার নিকট সন্তানের দৌলত থেকে বঞ্চিত থাকা কোনো দুঃখের বা চিন্তার কারণ ছিল না; বরং তিনি নবুওয়াত ও দ্বীনী শিক্ষার উত্তরাধিকারিত্বের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিলেন। এজন্য তিনি অতিশয়  বিনয়াবনত হয়ে প্রার্থনা করেছেন, ‘‘ হে আমার রব,আমাকে নিঃসন্তান রাখবেন না। আপনি তো চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী।’’ সূরা: আম্বিয়া-৮৯। কখনও তার হৃদয়ের গহীন অতল কন্দর থেকে উথলে ওঠে করুণ আর্তি-
‘‘হে আমার প্রতিপালক, আমাকে আপনার নিকট থেকে সৎ বংশধর দান করুন। আপনিই প্রার্থনা শ্রবণকারী।’’ -সূরা আলে ইমরান ৩৮

আল্লাহ পাকের মনোনীত একজন নবীর সকাতর প্রার্থনা, প্রার্থনা নিজের জন্য নয়; বরং সমাজ ও জাতির পথ প্রদর্শন ও কল্যাণচিন্তায়, সঙ্গে সঙ্গে কবুল হল। হযরত যাকারিয়া আ. ইবাদতে মশগুল ছিলেন। এমন সময় ফেরেশতার অবির্ভাব ঘটল। ফেরেশতা সুসংবাদ দিলেন, আপনার একজন পুত্রসন্তান জন্মলাভ করবে, আপনি তার নাম ইয়াহইয়া রাখবেন। একথা শুনে হযরত যাকারিয়া আ. সীমাহীন আনন্দিত হন। উপরের আলোচনায় আল-কুরআন ও আম্বিয়া (আ)-এর বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় উল্লেখিত দু’আ। এখন আলোচনায় আসাযাক বিশ্বনবী বিশ্ব শান্তি অগ্রদূত মুহাম্মদ (সা)-এর উম্মতের উল্লেখিত দু’আ নিম্নে আলোচনা করা হল :

কুরআন মজীদে পূববর্তী অনেক নবী রাসূলের জীবনকথা বর্ণিত হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে জীবনের নানা ঘটনায় নানা সংগ্রামে-সংকটে তাদের দুআ ও মুনাজাতের বিশেষ ভাষা ইতিহাস বর্ণনার ন্যায় উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু যেহেতু কুরআন মজীদ সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর প্রতি সরাসরি নাযিল হয়েছে, এজন্য তাঁর প্রার্থনা ও মুনাজাত বর্ণনার ভাষায় ভিন্নতা রয়েছে। তাঁর অধিকাংশ দু’আই আল্লাহ পাক তাঁকে ওহীর মাধ্যমে সরাসরি শিক্ষা দিয়েছেন। আবার কোনো কোনো দুআর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, মুমিন মুত্তাকীগণ এভাবে দু’আ করে, এই পরিস্থিতিতে এই ভাষায় প্রার্থনা করে এবং ধৈর্যধারণ করে বিনয়াবনত হয়। এগুলিও পরোক্ষভাবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুনাজাত। কারণ তিনি পৃথিবীর তাবৎ মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মুমিন ও মুত্তাকী। সুতরাং সে প্রার্থনা সৎ, নেককার, মুমিন ও মুত্তাকীদের, সে প্রার্থনা অবশ্যই সর্বাগ্রে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর।

আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদের প্রথম সূরায় হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর উম্মতকে সমগ্র জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ দু’আ শিক্ষা দিয়েছেন। এ দু’আর গুরুত্বের কারণে এর পূর্ববর্তী স্বীকার্য ও করণীয় বিষয়গুলোও স্পষ্টরূপে আলোচিত হয়েছে।
প্রথমেই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে সকল সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা, জীবনদাতা, পালনকর্তা ও মৃত্যুদাতা হিসাবে মুখে ও মনেপ্রাণে স্বীকার করতে হবে এবং এ কথাও স্বীকার করতে হবে যে, সকল প্রশংসার মালিক একমাত্র তিনিই। তিনি পরম দয়ালু, মৃত্যুপরবর্তী কর্মফল দিবসের মালিক। এরপর বলা হয়েছে, আমরা সকলে যেন একমাত্র তাঁরই ইবাদত করি এবং একমাত্র তাঁরই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। অতঃপর আল্লাহ তাআলা আমাদের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রার্থিত বিষয় ও প্রার্থনার ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, আমরা যেন তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব মাহাত্ম্য ও সপ্রশংসা মহিমা ঘোষণা করে তাঁর নিকট বিনয়াবনত চিত্তে সকাতর প্রার্থনা নিবেদন করে বলি,
‘(হে আল্লাহ), আমাদেরকে আপনি সরল পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথ, যাদেরকে আপনি অনুগ্রহ দান করেছেন, যারা ক্রোধ-নিপতিত নয়, পথভ্রষ্টও নয়’। ফাতিহা ৫-৭

এই দু’আ পাঠ করার পর আমীন বলা সুন্নত। আমীন অর্থ , হে আল্লাহ আপনি কবুল করুন। হযরত আবু হুরায়রা রা. ও হযরত ওয়াইল ইবনে হুজুর থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
পাঠ করার পর আমীন বলতেন। -মুসনাদে আহমেদ; আবু দাউদ; তিরমিযী;
দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ প্রার্থনা : সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ রাখতে হবে। আল্লাহকে স্মরণ রাখতে হবে। বিশেষ করে হজ্বের অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করার সময় গভীর অভিনিবেশ সহকারে অধিক পরিমাণে আল্লাহ পাকের যিকির করতে হবে। অতঃপর অত্যন্ত বিনয়াবনত হয়ে আল্লাহ পাকের নিকট দু’আ করতে হবে। কারণ এটি দু’আ কবুলের সময়। শুধু দুনিয়াবী বিষয়ে প্রার্থনা করলে চলবে না; বরং উভয় জগতের কল্যাণের জন্য দু’আ করতে হবে। এজন্য আল্লাহ পাক সেই সকল মুমিনকে সফলকাম বলে প্রশংসা করেছেন, যারা সর্বাবস্থায় বিশেষ করে হজ্বের কাজগুলো সমাপ্ত করার পর উভয় জাহানের কল্যাণে কামনা করে প্রার্থনা করে-   
‘‘হে আমদের রব! আমাদেরকে ইহকালে কল্যাণ দিন এবং পরকালেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। - সূরা বাকার-২০১ 

এই দু’আই দুনিয়া ও আখিরাতের সব ধরনের কল্যাণ লাভ করার এবং পরকালের সর্বপ্রকার অকল্যাণ থেকে আত্মরক্ষার প্রার্থনা করা হয়। ইহকালীন কল্যাণের মধ্যে জাগতিক সব প্রার্থিত বিষয় শামিল রয়েছে। যেমন মানসিক শান্তি, সুপ্রশস্ত নিবাস, উত্তম ও সুদর্শন জীবনসাথী, জীবিকার প্রাচুর্য, উপকারী ইলম ও সুখকর প্রশংসা ইত্যাদি। পরকালের কল্যাণের মধ্যে রয়েছে সব রকম ভীতিকার বিষয় থেকে মুক্তি, হিসাব সহজ হওয়া এবং আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পুরস্কার জান্নাত লাভ করা। জাহান্নাম থেকে নাজাতের প্রার্থনায় রয়েছে যে সব কাজ দ্বারা জাহান্নামে অগ্নিদগ্ধ হতে হবে, সেসব গোনাহ, পাপ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ থেকে দুনিয়ায় বেঁচে থাকার সামর্থ্য লাভ করা।

হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দু’আ সর্বদা পাঠ করতেন। হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা পাঠ করতেন,
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার জনৈক অসুস্থ মুসলিমকে দেখতে গেলেন। দেখলেন তিনি শুকিয়ে পাখির বাচ্চার মতো হয়ে গেছেন। নবীজী তাকে বললেন, তুমি আল্লাহর কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা কর? তিনি বললেন জ্বী হাঁ, আমি বলি, ‘হে আল্লাহ পরকালে আমার জন্য যে শাস্তি রয়েছে তা আপনি দুনিয়ায় দিয়ে দিন।’ একথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বলে উঠলেন, সুবহান্নাল্লাহ! তুমি তা সহ্য করতে পারবে না-
‘‘হে আমার রব! আমাদেরকে ইহকালে কল্যাণ দিন এবং পরকালেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। -সূরা বাকারা-২০১’’
নবীজীর নির্দেশক্রমে সাহাবী এই দু’আ করেন এবং রোগমুক্ত হন। -সহীহ মুসলিম
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সায়েব রা. থেকে বর্ণিত তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রুকনে ইয়ামনী ও হজ্বরে আসওয়াদের মধ্যখানে রাববানা আতিনা ফিদদুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানা, ওয়াকিনা আযাবান নার, পাঠ করতে শুনেছেন।

আরশের উপহার : আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমের সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলোতে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সকল মুমিনের প্রশংসা বলেছেন, তারা সকলে বিশ্বাস স্থাপন করেছে আল্লাহ পাকের প্রতি, তার ফেরেশতাগণের প্রতি, আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি এবং আল্লাহর সকল নবী রাসূলের প্রতি। তারা নবী রাসূলদের মাঝে কাউকে বিশ্বাস ও কাউকে অবিশ্বাস করার ন্যায় পার্থক্য করে না এবং তারা আল্লাহ পাকের নিকট প্রার্থনা করে, আমরা শুনেছি এবং অনুগত হয়েছি। হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা আপনার নিকট ক্ষমা চাই। প্রত্যাবর্তন তো আপনারই নিকট।
‘‘হে আমাদের, প্রতিপালক যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি তবে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না।’’
‘‘হে আমাদের রব, আমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যেমন গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করবেন না।’’

‘‘হে আমাদের প্রতিপালক, এমন ভার আমাদের উপর অর্পণ করবেন না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপ মোচন করুন, আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। আপনিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে বিজয়ী করুন।’’- সূরা বাকারা ২৮৫-২৮৬
মুআয জাবাল রা. এই দু’আগুলি পাঠ করে আমীন বলতেন।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসাউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওায়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত কোনো রাত্রে পাঠ করবে সে রাত্রে এই দুই আয়াতই তার জন্যে যথেষ্ট হবে। -বুখারী, মুসলিম
হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত আমাকে আল্লাহ পাকের আরশের নিম্নবর্তী ভান্ডার থেকে দান করা হয়েছে, যা ইতিপূর্বে কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। -মুসনাদে আহমদ

উকবা আমের রা. বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তোমরা সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ কর; কেননা, আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এর দ্বারা বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেন।
হযরত আবু যর রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা সূরা বাকারা এমন দুটি আয়াত দ্বারা খতম করেছেন যেগুলি তিনি আমাকে আরশের নিচের অমূল রত্নভান্ডার থেকে দান করেছেন। সুতরাং তোমরা নিজেরা এই আয়াতগুলো শেখ এবং তোমাদের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে শেখাও। কারণ এ দুটি আয়াত সালাত, কুরআন ও দু’আ। -মুসতাদরাকে হাকেম
হেদায়াতের উপর অবিচলতার দু’আ : সুদৃঢ় ও পরিপক্ব জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তিরা বলেন, কুরআনের সকল আয়াতই আমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে আগত, এর সবগুলিই আমরা বিশ্বাস করি। তারা আল্লাহ পাকের নিকট প্রার্থনা করে আরও বলে,
‘‘হে আমাদের প্রতিপালক, সরল পথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরকে সত্য-লঙ্ঘনকারী করবেন না এবং আপনার নিকট থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। হে আমাদের রব, আপনি মানবজাতিকে একদিন একত্রে সমাবেশ করবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই আল্লাহ নির্ধারিত সময়ের ব্যতিক্রম করেন না।’’ -আলো ইমরান ৮-৯।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি কোনো বস্ত্ত হারানোর পর দ্বিতীয় আয়াতখানি পাঠ করে এ দুআটি পড়ে তবে সে ওই হারানো জিনিসে ফিরে পায়।    

গুনাহ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির দুআ : কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহভীরু মুত্তাকীদের পরিচয় প্রদান করা হয়েছে। একস্থানে বলা হয়েছে তাকওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র জীবন এবং আল্লাহ পাকের পূর্ণ সন্তুষ্টি। তাকওয়া অবলম্বনকারী তারাই, যারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, আল্লাহ পাকের অনুগত, আল্লাহর পথে ব্যয়কারী এবং ঊষাকালে আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমাপ্রার্থী। যারা আল্লাহ পাকের নিকট বলে-
‘‘হে আমাদের পালনকর্তা আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং আপনি আমাদের পাপ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। - আলে ইমরান ১৬’’

সংকট রাববানীদের দু’আ : উহুদ সত্তরজন মুসলিমের শাহাদাত লাভ এবং অনেকের আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে কোনো কোনো মুসলমানের মন দুর্বল হয়ে পড়ে। আল্লাহ পাক সকলের মনে সাহস সঞ্চার এবং করণীয় ও বর্জনীয় নির্ধারণের উদ্দেশ্যে বলেন, বিভিন্ন যুগে বহু নবী যুদ্ধ করেছেন। তাদের সঙ্গে অনেক আল্লাহওয়ালা ছিল। আল্লাহর পথে তাদের কখনও বিপর্যয় ঘটলে তারা হীনবল হয়নি, দুর্বল হয়নি এবং নতও হয়নি। কঠিনতর পরিস্থিতিতেও তারা ধৈর্যধারণ করেছে। তখন এ আল্লাহওয়ালাদের একমাত্র প্রার্থনা ছিল
‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি আমদের পাপ এবং আমাদের কার্যে সীমালঙ্ঘন ক্ষমা করুন, আমাদের পা সুদৃঢ় রাখুন এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন। -আলে ইমরান ১৪৭
ভয়-ভীতির সময়ের দু’আ : হয় তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসের পনের তারিখ উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত। যুদ্ধ থেকে ফেরার পর মুশরিকগণ একে অপরকে ভৎর্সনা দিতে থাকে যে, তোমরা মুহাম্মাদকে হত্যা করতে পারনি। তোমরা তাদের শক্তি-সামর্থ্য ধ্বংস করেছ, তাদেরকে হত্যা ও আহত করেছ, কিন্তু তাদেরকে সমূলে উৎপাটিত করতে পারনি। অতএব পুনরায় মদীনায় আক্রমন করতে হবে।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহীর মাধ্যমে এ কথা জানতে পেরে পরদিন ষোলই শাওয়াল রবিবার সকালে হুকুম দেন, গতকাল যারা উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, তাদেরকে পুনরায় প্রস্ত্তত হয়ে শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। অথচ তখন সকলেই ছিলেন ক্লান্ত, আহত ও অবসন্ন। তৎসত্ত্বেও সকলেই বিপুল উদ্দীপনাসহ প্রস্ত্তত হয়ে শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। অথচ তখন সকলেই ছিলেন ক্লান্ত, আহত ও অবসন্ন। তৎসত্ত্বেও সকলেই বিপুল উদ্দীনাসহ প্রস্তুত হয়ে শত্রুবাহিনীকে পশ্চাদ্ধাবনের উদ্দেশ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রওয়ানা হন। তারা মদীনা থেকে আট মাইল দক্ষিণে অবস্থিত ‘হামরাউল আসাদ’ নামক জায়গায় অবস্থান করেন। এ সংবাদ জানতে পেরে মুশরিকদের যুদ্ধের খায়েশ হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। তখন তারা মুসলিমদেরকে ভীতি প্রদর্শনের এক কূটকৌশল অবলম্বন করে। তাদের কাফেলা মদীনায় আসছিল। এ কাফেলার লোকদেরকে ওরা বলল, তোমরা মুসলিমদেরকে সমূলে উৎখাত করার জন্য প্রস্তুত হয়েছি। অচিরেই তাদের উপর হামলা চালাব। তারা এ সংবাদ পৌছানো মাত্র সকল মুসলমান অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে একমাত্র আল্লাহ পাকের প্রতি নির্ভরতা প্রকাশ করে বলেন-
‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক।’- আলে ইমরান ১৭৩
হাদীস শরীফে এ দু’আটির অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে।

হযরত আব্দুল্লাহ  ইবনে আববাস রা. বলেন, হযরত ইবরাহীম আ.-কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয়, তখন তাঁর সর্বশেষ কথা ছিল ‘হাসবুনাল্লাহ ওয়ানি’মাল ওয়াকীল।’ -সহীহ বুখরী
হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চিন্তা বৃদ্ধি পেলে তিনি মাথায় ও দাঁড়িতে হাত বুলাতেন। অতঃপর লম্বা নিশ্বাস নিতেন এবং    
পাঠ করতেন। হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন দুআটি সকল ভীতিকর বিষয় থেকে নিরাপত্তা দেয়।

বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণের দু’আ : আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে ইরশাদ করেছেন, আমি মুমিনদেরকে ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা করব। এরূপ কঠিন পরীক্ষার সময়ও যারা ধৈর্যধারণ করবে, তাদের জন্য শুভ-সংবাদ। তাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অশেষ দয়া বর্ষিত হয়, এবং এরাই সৎপথে পরিচালিত। ধৈর্যশীল তারাই যাদের উপর বিপদ আপতিত হলে বলে,
‘আমরা সকলে তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তার দিকেই আমরা প্রত্যাবর্তনকারী।’-বাকারা ১৫৬
বিপদে আপদে এই দুআ পাঠ করার অনেক ফযীলত রয়েছে। উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যেকোনো বান্দা বিপদগ্রস্ত হয়ে যদি পাঠ করে
তবে আল্লাহ তাআলা তাকে উত্তমভাবে পুরস্কৃত করেন এবং সেই মুসীবতের পরিবর্তে উত্তম বদলা দান করেন উম্মুল মুমিনীন বলেন, আমার স্বামী আবু সালাম মারা যাওয়ার পর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথামতো আমল করেছি। পরবর্তীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বিবাহের মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমাকে উত্তম বদলা দান করেন।

হযরত আবু মুসা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মালাকুল মউত, তুমি কি আমার বান্দার সন্তানের জান কবজ করেছ? তুমি কি তার নয়নের মণি ও কলিজার টুকরা কে কবজ করেছ? ফেরেশতা বললেন হাঁ। আল্লাহ পাক বলেন, আমর বান্দা কী বলেছে? মালাকুল মউত বলেন সে আপানার প্রশংসা করেছে এবং পাঠ করেছে। আল্লাহ তাআলা তখন বলেন, জান্নাতে তার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ কর এবং সে গৃহের নাম রাখ বাইতুল হামদ। -জামে তিরমিযী; মুসনাদে আহমদ
হোসাইন ইবনে আলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, কোনো মুসিল নর-নারী বিপদগ্রস্ত হওয়ার অনেকদিন পর বিপদের কথা স্মরণ করে যদি        
তবে আল্লাহ পাক তাকে বিপদের দিন পাঠ করার সওয়াব দান করবেন।

জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের দুআ :  আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আকাশম লই ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে জ্ঞানী লোকদের জন্য। জ্ঞানী তারাই যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় এক কাথায় সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে এবং যারা আল্লাহ নিকট প্রার্থনা ক--
‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি এই সকল বস্ত্ত অনর্থক সৃষ্টি করেছেন। আপনি এই সকল বস্ত্ত অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র। আপনি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি কাউকেও অগ্নিতে নিক্ষেপ করলে তাকে তো নিশ্চয় লাঞ্ছিত করলেন এবং জালিমদের রব, আমরা এক আহবানকারীকে ঈমানের দিকে এ আহবান করতে শুনেছি যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আন। সুতরাং আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব, আপনি আমাদের পাপ ক্ষমা করুন, আমাদের মন্দ কার্যগুলি দূরীভূত করুন এবং আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের সহগামী করে মৃত্যু দান করুন।
হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার রাসূলদের মাধ্যমে আমাদেরকে যে সওয়াব ও জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা আমাদেরকে দিন এবং কিয়ামতের দিন আমাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন না। নিশ্চয় আপনি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।’ -আলে ইমরান ১৯১-১৯৪
আল্লাহ পাক এ সকল জ্ঞানী লোকের প্রার্থনার সাড়া দেন। তিনি তখন বলেন, আমি তোমাদের মধ্যে কর্মে বিনষ্ট কোনো নর অথবা নারীর কর্ম বিফল করি না।

মুনাজাতের এ আয়াত দুটি পাঠ করার অনেক ফযীলত রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষরাতে এই আয়াতগুলি পাঠ করতেন। যেমন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের তৃতীয় প্রহরে শয্যা ত্যাগ করে আকাশের দিকে দৃষ্টি উত্তোলন করে এ আয়াতগুলো পাঠ করেন। অতঃপর ভালোভাবে অযু করে তাহাজ্জুদ আদায় করেন। - সহীহ বুখারী

পিতা মাতার জন্য দুআ : আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম এর সকল উম্মতকে পিতামাতার জন্য দুআ করতে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে হুকুম দিয়েছেন, সকলে যেন পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে। আল্লাহ তাআলা আরও বলেছেন, পিতামাতার উভয়ে বা কোনো একজন বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে বিরক্তি, উপেক্ষা, অবজ্ঞা, ক্রোধ ও ঘৃণাসূচক কোনো কথা বলা যাবে না এবং তাদেরকে ধমক দেওয়া যাবে না। তাদের সঙ্গে সর্বদা সম্মানসূচক নম্র কথা বলতে হবে। আল্লাহ তাআলা মমতাবেশে নম্রতার পক্ষপুট অবনমতি করবে এবং সর্বদা তাদের জন্য আল্লাহ পাকের নিকট এই প্রার্থনা করবে।
‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি আমার পিতামাতার প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।  -বনী ইসরাইল ২৪
এরূপ গুরুত্ব সহাকারে মাতাপিতার খেদমত ও তাদের জন্য দুআ করার নির্দেশ থাকার কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওায়াসাল্লাম উভয়কে বা কোনো একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পাওয়ার পর তাদের খেদমত করে জান্নাত লাভ করতে পারল না, সে অভিশয় হতভাগা। - মুসনাদে আহমদ

হিজরতের দুআ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াত প্রাপ্তির পর তের বছর মক্কায় অবস্থান করেন। তিনি আল্লাহ পাকের হুকুমে আউয়াল মাসের শুরুর দিকে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন। হিজরতের পূর্ব, মুহূর্তে আল্লাহ পাক তাকে এ প্রার্থনা করতে বলেন-
‘হে আমার পালনকর্তা, আমাকে দাখিল করুন কল্যাণের সঙ্গে এবং আমাকে নিষ্ক্রান্ত করবেন কল্যাণের সঙ্গে এবং আপনার নিকট থেকে আমাকে দান করুন সাহায্যকারী শক্তি।’ -সূরা বনী ইসরাইল ৮০
আল্লাহ মহাত্য বর্ণনা : আল্লাহ তাআলা সূরা বনী ইসরাঈলের সর্বশেষ আয়াতে সকল মুমিনকে আরও একটি দুআ শিক্ষা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে-
‘বল সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই, যিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেন না, তাঁর রাজত্বে কোনো অংশীদার নেই এবং যিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না, যে কারণে তার অভিভাবক প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং সসম্ভ্রমে তার মাহাত্য ঘোষণা কর। -সূরা বনী ইসরাঈল ১১১
এই আয়াতটি তাওরাত শরীফের শেষ আয়াত ছিল।

জ্ঞান বৃদ্ধির দুআ :  এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিম্নোক্ত দুআটি করতে বলেন,
‘হে আমার প্রতিপালক, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।’ -সূরা ত্বাহা ১১৪
জ্ঞান বৃদ্ধির দুআ একটি সর্বব্যাপী ও বহুবিস্তীর্ণ প্রার্থনা। সুতরাং এ দুআর মধ্যে অর্জিত ইলম স্মরণে থাকার, অজানা ইলম জ্ঞানায়ত্ত বোধ জাগ্রত হওয়ার প্রার্থনা অধিভুক্ত রয়েছে। এজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ পাকের মহান দরবারে এ দুআ অধিক হারে করতেন।
ফয়সালা প্রার্থনা : আল্লাহপাক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছেন, কাফের সম্প্রদায় যদি আপনার আহবানে সাড়া না দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আপনি বলে দিন, আমি তোমাদেরকে যথাযথভাবে জানিয়ে দিয়েছি এবং তোমাদেরকে যে শাস্তির কথা বলা হয়েছে তা অবশ্যই আপতিত হবে। তবে আমি জানি না তা অত্যাসন্ন, না দূরস্থিত। শাস্তি বিলম্বিত হওয়ার দ্বারা শাস্তি সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই। হয়তো বিলম্বিত হওয়াও তোমাদের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। এরূপ বিভিন্নভাবে বোঝানোর পরও যখন তারা হেদায়াত কবুল করেনি, তখন আল্লাহ পাকের অনুমতিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রার্থনা করেন-
‘হে আমার প্রতিপালক, আপনি ন্যায়ের সঙ্গে ফয়সালা করে দিন। আমাদের প্রতিপালক তো দয়াময়, তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে একমাত্র সহায়স্থল তিনিই। -সূরা আম্বিয়া ১১২
অর্থাৎ সত্যকে মিথ্যার উপর, আলোকে অন্ধকারের উপর বিজয় দান, করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এই দু’আ আল্লাহ পাক কবুল করেন। বদর যুদ্ধের দিন সত্য মিথ্যা মীমাংসা হয়।

আযাব থেকে নাজাত পাওয়ার দু’আ : কাফের সম্প্রদায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লামকে ঠাট্টা করে বলত, যারা অপনাকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের উপর শাস্তি কখন আসবে? আল্লাহ তাকে বলেন, ওদের দুর্ব্যহার ও নির্যাতনে আপনি দুঃখিত ও মনক্ষুণ্ণ হবেন না; বরং তাদের দুর্ব্যবহারের জবাব সদ্ব্যবহার দ্বারা দেবেন। আর আপনি নিশ্চিত বিশ্বাস রাখবেন, যে শাস্তির ওয়াদা তাদেরকে দেওয়া হয়েছে তা সত্তর হোক বিলম্বে হোক অবশ্যই তাদের উপর আসবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ পাকের নিকট তখন এ দুআ করেন-
‘হে আমার প্রতিপালক, যে শাস্তির বিষয়ে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হচ্ছে তা যদি আপনি আমাকে দেখাতে চান, তবে হে আমার প্রতিপালক, আপনি আমাকে জালিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করবেন না।’
সে ভয়াবহ আযাব যদি আমার জীবদ্দশায় অবতীর্ণ হয়, তবে আমাকে সে আযাব থেকে নিরাপদ রাখবেন।
যদিও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপরাধীদের শাস্তির অন্তর্ভুক্ত কখনো হবেন না, তৎসত্ত্বেও অতিশয় বিনয়াবনত হয়ে এরূপ প্রার্থনা করেছেন।
এর দ্বারা সকল মুসলিমকে এ শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে যে, সকলকে সর্বদা আল্লাহ পাকের আযাবের ব্যাপারে এরূপ ভীত সন্ত্রস্ত থাকতে হবে।
আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হুকুম দেন যে, তাদের প্রতি শাস্তি না আসা পর্যন্ত আপনি তাদের মন্দ আচরণের মোকাবিলা করুন উত্তম ব্যবহার দ্বারা।

‘হে আমার প্রতিপালক, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি শয়তানের প্ররোচনা থেকে, হে আমার রব, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার কোনো বিষয় শয়তানদের উপস্থিতি থেকে। -মুমিনুন ৯৭-৯৮
মুমিনের দু’আ : অপরাধীদের জাহান্নামে নিক্ষেপের পর, তারা আর্তস্বর উঠিয়ে শাস্তি থেকে বের হওয়ার প্রার্থনা করবে। আল্লাহ পাক বলবেন, আমার নেককার বান্দাগণকে নিয়ে তোমরা এতো ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে যে, তোমরা আমার কথা বিস্মৃত হয়েছিলে। ফলে তোমাদের জন্য জাহান্নামে অবধারিত হয়েছে। আর পুণ্যবান ও সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদেরকে আমি আজ পুরস্কৃত করেছি। পৃথিবীতে সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের প্রার্থনা ছিল-
‘হে আমাদের প্রতি পালক, আমরা ঈমান এনেছি। আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন ও আমাদের প্রতি দয়া করুন। দয়ালুদের মধ্যে আপনি তো সর্বোৎকৃষ্ট দয়ালু।’-মুমিনূন ১০৯
আল্লাহ পাক হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে নবী, আপনি ও আপনার অনুসারীগণ সর্বদা এই দুআ করুন
‘‘হে আমার প্রতিপালক, ক্ষমা করুন ও দয়া করুন, দয়ালুদের মধ্যে আপনিই তো শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’’-মুমিনুন- ১১৮।

জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তির দুআ : কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, দয়াময় ও পরম দয়ালু আল্লাহ তাআলার অনুগত বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে। তাদেরকে অজ্ঞ ব্যক্তিরা সম্বোধন করলে তর্কে অবতীর্ণ হয় না বরং শান্তি কামনা করে। যারা প্রতিপালকের উদ্দেশ্য সিজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান হয়ে রাত্রি অতিবাহিত করে, যারা ব্যয় করার সময় অপচয় করে না, কার্পণ্যও করে না, কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে না, যারা ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং অসার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হলে তা পরিহার করে চলে, যারা তাদের একমাত্র রবের নিকট এই প্রার্থনা করে
‘‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি বিদূরিত করুন, জাহান্নামের শাস্তি তো নিশ্চিত বিনাশ।’’ ফুরকান-৬৫।
‘‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান সন্তন দান করুন, যারা আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর হবে এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্য আদর্শস্বরূপ করুন।’’-ফুরকান-৭৪।

বাহনে আরোহনের দুআ : কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, পরাক্রমশীল ও সর্বজ্ঞ আল্লাহই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা, যিনি তোমাদের জন্য এমন নৌযান ও চতুস্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যার উপর তোমরা আরোহণ কর, যাতে তোমরা এগুলোর পৃষ্ঠে স্থির হয়ে বসতে পার। তারপর তোমাদের জন্য এমন নৌযান ও চুতস্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যার উপর তোমরা আরোহণ কর, যাতে তোমরা এগুলির পৃষ্ঠে স্থির হয়ে বসতে পার। তারপর তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন তোমরা এগুলোর উপর স্থির হয়ে বস, এবং তখন বল-
‘‘পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি এগুলোকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা এগুলো বশীভূত করতে সমর্থ ছিলাম না। আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব।’’ -যুখরুফ ১৩-১৪।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফরের উদ্দেশ্যে বাহনে পা রাখতেন, তিনবার আল্লাহু আকবার বলতেন অতঃপর পাঠ করতেন
অতঃপর তিনবার আলহামদুলিল্লাহ ও তিনবার আল্লাহ আকবার পাঠ করতেন।

আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার দু’আ : আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা পবিত্র কুরআনে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছেন, যদি কাফের সম্প্রদায় আপনার আহবানে সাড়া না দেয়, বরং আপনি যে পুর্ণাঙ্গ, পবিএ ও মহান শরীয়ত নিয়ে এসেছেন, তা থেকে   মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আপনি বলুন
মানুষের বয়স সাধারণত চল্লিশ বছরে উপনীত হওয়ার পর তার  জ্ঞানে, বোধশক্তিতে ও আখলাক পরিপক্বতা সৃষ্টি হয়।

নককাজের তাওফীক লাভের দু’আ : আল্লাহ পাকের ভাগ্যবান   বান্দাগণ চল্লিশ বছরে   পৌছার পর অর্থাৎ জ্ঞানে পক্বতা আসার পর আল্লাহ পাকের মহান  দরবারে এই দুআ করেন
‘হে আমার প্রতিপালক, আপনি আমাকে সামর্থ্য দিন, যাতে আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার প্রতি ও আমার পিতামাতার প্রতি আপনি যে অনুগ্রহ করেছেন তার জন্য এবং যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি যা আপনি পছন্দ করেন। আমার জন্য আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ করুন। আমি আপনারই অভিমুখী হলাম এবং আপনারই নিকট আত্মসমর্পণ করলাম।’-আহকাফ ১৫
উল্লেখ যে, এ দুআটি যে কোনো বয়সেই করা যায়।

ইসলাম ভ্রাতৃত্বের দু’আ : সাহাবা আজমাঈন আল্লাহ তাআলার মনোনীত জামাআত। তাঁরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সরাসরি সান্নিধ্যপ্রাপ্ত পুণ্যবান দল। আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে তাদের প্রশংসায় বলেছেন, তারা আল্লাহ পাকের  প্রতি সন্তুষ্ট, আল্লাহ পাকও তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। পরবর্তী যুগ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত তারাই আল্লাহ পাকের সন্তোষভাজন, যারা সাহাবায়ে কেরামের পদাঙ্ক অনুসারী, যারা এ দু’আ করে-
‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের পূর্ববর্তী ভ্রাতাগণকে ক্ষমা করুন এবং সমকালীন মুমিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে হিংসা বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি তো দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।’- সুরা হাশর ১০
এ আয়াতে থেকে জানা গেল যে, সাহাবায়ে কেরামের মাহাত্য ও ভালোবাসা অন্তরে পোষণ করা এবং তাদের জন্য দুআ করা ঈমানের দাবি।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, শিয়া মতাবলম্বীদের মনে সাহাবায়ে কেরামের প্রতি কোনোরূপ আস্থা নেই, ভক্তি ভালোবাসার তো প্রশ্নই আসে না। তারা সাহাবায়ে কেরামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে। অতএব শিয়ারা আল্লাহ পাকের সন্তোষজনক নয়, বরং বিরাগ ভাজন।

আল্লাহ সমর্পন : আল্লাহ পাক হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছেন আপনি বলুন,
আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগতের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্য । তাঁর কোনো শরীক নেই । আমি একথারই আর্দিষ্ট হয়েছি এবং আত্মসমপর্ণকারীদের মধ্যে আমিই প্রথম।’ সূরা আনআম ১৬২-১৬৩ 
হাকীমূল উম্মত হযরত থানভী রহ বয়ানুল কুরআন বলেছেন, আয়াতের সারানির্যাস এই যে, যেমনিভাবে ইবাদত বন্দেগীর ক্ষেএে আল্লাহ পাকের কোনো শরীক নেই, তেমনি জগতের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণেও আল্লাহ তাআলার কোনো অংশীদার নেই। এ-ই তাওহীদের সমষ্টি। এ কথাই ইসলামের শিক্ষা। আর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরই আদিষ্ট হয়েছেন। এ কথা দ্বারা সূক্ষ্মভাবে সকলের প্রতি আহবান করা হযেছে যে, নবীর প্রতি যে বিষয়ের আদেশ করা হযেছে সে আদেশ সকলের পওতি রয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুআ খানি পশু কুরবানী করার সময় পাঠ করেছেন-
রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসসাল্লাম এ আয়াতখানি দুআ হিসাবে তাহাজ্জুদ নামাযেও পাঠ করতেন । হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম (রাতের নামাযে) সানা পড়ে আল্লাহ আকবার বলে এ আয়াতখানি পাঠ করতেন ।
নবীগণের দু’আ এর সংযুক্তি : হযরত রাসূল কারমি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মনে প্রাণে কামনা করে যে, কেয়ামতের দিন তাকে পরিপূর্ণ মাপে সওয়াব প্রদান করা হোক, সে যেন তার সকল বৈঠকের শেষে পাঠ করে...
মুশরিকরা  যা আরোপ করে তা থেকে পবিত্র ও মহান তোমার প্রতিপালক , যিনি সকল ক্ষমতার অধিকারী । শান্তি বর্ষিত হোক রাসূলদের প্রতি । সকল প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ জন্যে । - কুরতুবী ১৫/ ৯২
হযরত সাঈদ ইবনে আরকাম রা. এর সূত্রে বর্ণিত অপর এক হাদীসে রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযের পর এ আযাতগুলি তিনবার পাঠ করবে সে পূণ্যমাপে প্রতিদান পাবে।-ইবনে কাসীর ৭/৪৭

পবিত্র কুরআনের তাফসীরকারগণ এই আয়াতের বিশ্লেষণে একখানি হাদীস এনেছেন। হযরত তালহা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমার যখন আমার পওতি সালাম পেশ করবে,
তখন সকল রাসূলের প্রতি সালাম পাঠ করবে।-ইবনে কাসীর ৭/৪৭
আল্লাহ তাআলা হাশরের দিন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার অনুসারী মুমিন মুক্তাকীদের অপদস্থ করবেন না। তারা যখন পুলসিরাতের উপর দিয়ে চলতে থাকবে, তখন তাদের সঙ্গে আল্লাহ প্রদর নূর চলতে থাকবে। সেই মুহূর্তে হঠাৎ করে মুনাফিকদের নূর নির্বাপিত হয়ে যাবে। মুনাফিকদের অবস্থা দেখে মুমিনগন ভীত শঙ্কিত হয়ে আল্লাহ পাকের নিকট এ প্রার্থনা করবে-
‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের নূরকে পূর্ণতা দান করুন এবং আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।’- তাহরীম ৮। আল্লাহ পাক যেন আমাদেরকে আল-কুরআন, আম্বিয়া (আ) এবং বিশ্বনবীর বিশ্ব শান্তি উপর উল্লেখিত দু’আ শিক্ষানীয় আমাদের জীবনের আলোয় আলোকিত করার তৌফিক দান করুন। ‘‘আমীন’’।
লেখক: সাবেক শিক্ষক, ঝিঙ্গাবাড়ী ফাযিল আলিয়া মাদ্রাসা, সিলেট।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।