সংবাদ শিরোনামঃ

জনগণ কান পেতে আছে ‘রাজপুত্র’দের কথা শুনছে ** ঝরাও রক্ত ঝরাও রক্ত, যতো খুশী তুমি পারো, রাজপথে আজ জনতা জেগেছে, যতো খুশী তুমি মারো ** মুসলিম উম্মাহকে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে ** ব্যর্থ সরকার জনসমর্থন হারিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছে ** সরকারকে গণতান্ত্রিক আচরণ করতে হবে ** ২৫ জানুয়ারিতেই সংসদের অধিবেশন কেন? ** সংবাদপত্রের পাতা থেকে ** হাতি ও আবাবিল ** বিশ্ব নবী (সা.) এর ন্যায় বিচার ** উত্তরাঞ্চলে ৬ মাসে ২০ যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ **

ঢাকা শুক্রবার ২১ মাঘ ১৪১৮, ১০ রবিউল আওয়াল ১৪৩৩, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২

॥ খন্দকার মহীউদ্দীন আহমদ॥
২০১১ সালে আরব বসন্তের সূচনালগ্নে আরব বিশ্বজুড়ে পরিবর্তনের যে ধারা লক্ষ্য করা গিয়েছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে তা আজও সফলতার মুখ দেখেনি। তিউনিসিয়া ও মিসরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটা পর্যায়ে পৌঁছলেও সিরিয়া ও লিবিয়ায় চলছে বিশৃঙ্খলা। ইরানের পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে বিরাজ করছে যুদ্ধাবস্থা। ফলে মধ্যপ্রাচ্য নতুন করে সঙ্কটের  মুখোমুখি হচ্ছে। হরমুজ প্রণালি বন্ধের ইরানী হুমকি ও যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনসহ ইসরাইলের পাল্টা হুমকিতেও উপসাগরীয় অঞ্চলে তাদের বড় আকারের সামরিক উপস্থিতিতে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে পুরো অঞ্চল। ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের অতিমাত্রার বাড়াবাড়ি ও পশ্চিমাদের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের কারণে মহাবিপর্যয়ের দিকে মোড় নিতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যসহ পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে। ইরাকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। আত্মঘাতী বোমা হামলা ও শিয়া-সুন্নী হামলা ও পাল্টা হামলায় বিধ্বস্ত পুরো ইরাক। এখনও পর্যন্ত স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠার আলামত সেখানে দেখা যাচ্ছে না। আফগানিস্তানে ন্যাটো জোটের উপস্থিতিতে কাক্সিত শান্তি অর্জন হয়নি। বিদেশি সৈন্যদের আফগান ত্যাগ ও পরবর্তী সরকার গঠন ফর্মুলা নিয়ে কোনো সমঝোতা এখনও হতে দেখা যায়নি। সিরিয়ায় ১০ মাস থেকে চলা সহিংসতা বন্ধে ক্ষমতা হস্তান্তরের আরব লীগ ফর্মুলা প্রত্যাখ্যান করেছেন বাশার আল আসাদ। আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সর্বশেষ এক প্রস্তাবে আসাদকে তার সরকারের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ও নির্বাচন দেয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। প্রস্তাবে সিরিয়ায় শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছিল। এই প্রস্তাব ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহ এর ক্ষমতা হস্তান্তর ফর্মুলার সাথে তুলনীয়। এদিকে সংঘাত বিুব্ধ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আরব লীগ প্রধান নাবিল এল আরাবী। মিসরের আল হায়াত টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা করছি। আমরা সেখানে যা দেখছি এবং শুনছি তাতে মনে হচ্ছে সহিংসতা গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সিরিয়ায় কোনো সমস্যা হলে তা প্রতিবেশী দেশগুলোও জড়িয়ে পড়বে। এদিকে বহুল আলোচিত পর্যবেক্ষক মিশন স্থগিত করেছে আরব লীগ। অপরদিকে নিরাপত্তা পরিষদে গত শুক্রবার সিরিয়ার সঙ্কট নিরসনে আরব লীগের প্রস্তাবের আলোকে ঐকমত্যের সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট বাশার তার নিকটতম ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার দুই মাসের মধ্যে বিরোধী দল নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন করা হবে। এ আহ্বানে সাড়া না দেয়া হলে সিরিয়ার ওপর কঠোর অবরোধ আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে জাতিসংঘে রাশিয়ার দূত ভিতালী চুরকিন বলেন, ওই প্রস্তাবে কোনো ধরনের অবরোধ এবং অস্ত্র বাণিজ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত নয়।

সিরিয়ার সাথে রুশের সখ্য রয়েছে এবং বাশার আল আসাদের পদত্যাগ ও সরকার পরিবর্তনের বিষয়টি রুশ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিধায় রুশ প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে। রুশ সিরিয়ার সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। এদিকে রুশের একটি অস্ত্র জাহাজ সিরিয়ায় অস্ত্র সরবরাহ করছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে পশ্চিমা বিশ্ব। এক সংবাদ সম্মেলনে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এর ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এর আগে সিরিয়ায় কোনো ধরনের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ। একই সাথে তিনি সিরিয়ার সরকার বিরোধীদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার জন্যও পশ্চিমা দেশগুলোকে আহ্বান জানান। উল্লেখ্য যে, সিরিয়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরব সেনা পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন কাতারের আমীর শেখ হামাদ বিন খলিফা। সিরিয়া এই প্রস্তাবকে তার সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার লঙ্ঘন বলে নাকচ করে দেয়। সিরিয়ার পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হলেও বাশার আল আসাদের নির্যাতনের মাত্রা কমছে না। তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়কে বরাবর উপেক্ষা করে চলছেন। ১০ মাস থেকে চলমান সংঘর্ষে ৫ হাজারের বেশি সিরিয়ান নিহত হয়েছে। দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। জনগণ যখন তাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না তখন তার এভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার সার্থকতা নেই। তিনি বাস্তবে কোনো প্রস্তাবে সাড়া দিচ্ছেন না। আরব লীগ ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবও তিনি মানতে রাজি নন। রুশের সামরিক সাহায্য পেয়ে তিনি হয়তো নিজেকে ক্ষমতাধর ভেবে নিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে তার পায়ের তলার মাটি নেই তা তিনি বুঝতে অক্ষম। তার বোঝা উচিত, এভাবে হোসনী মোবারক বা আলী আব্দুল্লাহ ক্ষমতায় টিকতে পারেননি। তিনিও পারবেন না। আমরা তার শুভবুদ্ধি কামনা করি। কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফীর পতনের পর লিবিয়ার পরিস্থিতি দিন দিন অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। গভীর সঙ্কটে ঘুরপাক খাচ্ছে লিবিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এনটিসি। বস্তুতপক্ষে এনটিসি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর করবে, লিবিয়ার গোষ্ঠীগত দলপতি ও গোত্র প্রধান নেতারা এই আস্থা রাখতে পারছেন না। তাদের সন্দেহ এনটিসি ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চায় এবং পশ্চিমাদের সহযোগিতায় ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্র করছে। তাছাড়া এনটিসির স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এনটিসি প্রকৃত অর্থে লিবিয়ার বিবদমান গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্রমুক্ত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। দেশকে অস্ত্রমুক্ত করা এবং সর্বত্র সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করাই এনটিসির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার মতো উল্লেখযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য কোনো পদক্ষেপ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিতে সক্ষম হয়নি। সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার জন্যই সর্বত্র এখন বিদ্রোহের পরিস্থিতি বিরাজমান। গাদ্দাফীপন্থীরা বেশ সুসংহত। বেনগাজী বনিওয়ালিদের কর্তৃত্ব এখন তাদেরই হাতে। বেন ওয়ালিদের এক সংঘর্ষে এনটিসির ৪ জন যোদ্ধা গাদ্দাফীপন্থীদের গুলিতে নিহত হয়েছে। রাজধানী ত্রিপলীর নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি এনটিসির হাতে নেই। প্রতিরাতেই সংঘর্ষ ও গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যায়। মানুষের জান ও মালের নিরাপত্তা নেই। জাতিসংঘ জানিয়েছে ৮ হাজারের বেশি গাদ্দাফী সমর্থক একটি শক্তিশালী গ্রুপ গঠন করেছে এবং তারাই বিভিন্ন স্থানে হামলা করছে। নিরাপত্তা পরিষদের মতে ত্রিপলী, বেনগাজী ও বনি ওয়ালিদের সাম্প্রতিক হালায় এটি স্পষ্ট যে, লিবিয়ায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, লিবিয়ার পরিণতি ক্রমান্বয়ে ইরাকের ন্যায় হতে যাচ্ছে। রাজনৈতিক ঝুঁকি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নর্থ আফ্রিকা রিস্ক কনসালন্টিংয়ের জিওফ পোর্টার বলেন, মার্কিন নেতৃত্বে সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর ইরাকে যে পরিস্থিতি হয়েছিল লিবিয়াও সেদিকে যাচ্ছে। বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে কোন্দল সরকারের বৈধতাকে খোলাখুলিভাবে চ্যালেঞ্জ জানানোর ফলে খুব শিগগির শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা সেখানে নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়ায় জনগণের সম্পৃক্ততা নেই। পশ্চিমারা সরকার গঠনে বড় ধরনের ভুল করেছে। দুর্বলচিত্তের গণবিচ্ছিন্ন লোকবল দিয়ে প্রশাসন চলে না। তাছাড়া লিবিয়ায় গাদ্দাফী আমলে দক্ষ প্রশাসন গড়ে ওঠেনি। তুঘলকি কায়দায় চলছে দেশ। প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে অস্ত্রের ভাষায়। সেই শক্তিভঙ্গ হওয়ায় এখন ক্ষমতার ভারসাম্য নেই। তাছাড়া লিবিয়ার জনগণ সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তিতে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের থেকে ঊর্ধ্বে ছিল যা বর্তমান সরকারের সময়ে বন্ধ রয়েছে। জনগণের হাতে অস্ত্র পৌঁছে গেছে আর অর্থপ্রাপ্তি বন্ধ রয়েছে। বেকার যুবকদের হাতে অস্ত্র দেশের জন্য শঙ্কা ও উৎকণ্ঠার কারণ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হলে লিবিয়ার পরিস্থিতি যে ভয়ঙ্কর অবনতি ঘটবে তাতে সন্দেহ নেই। দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোকবলের সমন্বয়ে জনপ্রশাসন  ঢেলে সাজানো এবং সমগ্র দেশে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করতে ব্যর্থ হলে সহিংসতা আরও বাড়বে। আর এনটিসিকে সেদিকে মনোযোগী হতে হবে। আশার বিষয় হলো, মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা লিবিয়ায় ইসলামপন্থীরা সংঘবদ্ধ হচ্ছে। শরীয়া আইনের দাবিতে রাজধানী ত্রিপলী ও বেনগাজীতে মিটিং-মিছিল হয়েছে। মুসলিম ব্রাদারহুডের আত্মাপ্রকাশ এবং অবস্থান সুসংহত করার প্রচেষ্টা লিবিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। গাদ্দাফী পরবর্তী শাসনব্যবস্থায় ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর উত্থানের প্রতিক্রিয়া লিবিয়ায় শরীয়া আইনের দাবি উঠেছে। লিবিয়ায় মুসলিম ব্রাদারহুড ও সমমনা ইসলামী দলগুলোর উত্থানের মধ্যদিয়ে আগামী নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস বলে মনে করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের ধারাবাহিকতায় গাদ্দাফী পরবর্তী লিবিয়ায় সাধারণ নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের শক্তিশালী দল হিসেবে উত্থানের সম্ভাবনা রয়েছে।

ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে যেকোনো সময়ে একতরফা হামলার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ইসরাইল। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এহুদ বারাক মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জেনারেল মার্টিন ডিম্পকে জানিয়েছেন, ইরানে হামলা শুরুর ১২ ঘণ্টা পূর্বে তারা বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে জানাবে। একই সাথে ইসরাইলী নেতারা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তারা প্রেসিডেন্ট ওবামাকে সমর্থন জানাবে যাতে তিনি পুনঃনির্বাচিত হন। সুতরাং ইরানে ইসরাইলী হামলা ও ওবামার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। এদিকে ফরাসী প্রেসিডেন্ট নিকোলা সরকোজি সকলকে সতর্ক করে বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হস্তক্ষেপে তার সমাধান আসবে না। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইরানে সামরিক হামলা হবে একটি মারাত্মক বিপর্যয় এবং এর পরিণতি হবে মারাত্মক। এতে শরণার্থী সঙ্কট সৃষ্টি হবে এবং গোষ্ঠীগত উত্তেজনা সৃষ্টি হবে এবং পরবর্তী প্রতিক্রিয়া কোথায় গিয়ে শেষ হবে তা আমার জানা নেই। এদিকে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে নৌবহর বৃদ্ধি করে চলছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। এই দুই বৃহৎ শক্তির নৌ বহরের উপস্থিতিতে পুরো অঞ্চলের সামরিক ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। বিষয়টি ইরানের জন্য উস্কানিমূলক। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবর অনুযায়ী ইরানে ইসরাইলী হামলার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়াগুলোর ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলা পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতির লক্ষ্য। তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ধরেই নিয়েছে ইরানে সামরিক হামলা হচ্ছে। এদিকে ইরানী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ দেশটির পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সাথে আলোচনায় বসার প্রস্তাব করেছেন। অন্যদিকে ইইউর বৈদেশিক নীতিবিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাস্টিন আলোচনার টেবিলে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি নতুন করে আলোচনা শুরুর প্রস্তাব করেন। তবে নতুন করে অবরোধ আরোপের ফলে ইরান ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলে মত দিয়েছেন ইরানী প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, এক সময়ে আমাদের বাণিজ্যের ৯০ শতাংশই ছিল ইউরোপের সাথে। কিন্তু বর্তমান সময়ে তা ১০ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। এই ১০ শতাংশ খোঁজার চেষ্টা ইরান করছে না বলেও তিনি জানান। আহমাদিনেজাদ বলেন, গত ৩০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কাছ থেকে তেল কেনেনি, আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এদিকে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি উপাদান ইউরেনিয়াম উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। ফলে দেশটি পারমাণবিক বোমা তৈরিতে সক্ষম নয় বলে এক চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন পেশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইন্সটিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি। গত বুধবার প্রকাশিত এই নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদনের পর পশ্চিমাদের সুর পাল্টাতে দেখা গেছে, তারা এখন আলোচনার প্রস্তাব করছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরানের বিরুদ্ধে রণসজ্জায় সজ্জিত হলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ইরানের পারমাণবিক  অস্ত্র তৈরির সামর্থ্য নেই। এমন এক সময়ে এই প্রতিবেদন পেশ করা হলো যখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা দাবি করছে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির আড়ালে পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক হামলার প্রস্তুতিসহ কঠোর অবরোধ আরোপের চেষ্টা চালাচ্ছে। ইরানকে এক হাত নেয়ার সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। বেসরকারি এই প্রতিবেদনটি তৈরির সাথে পারমাণবিক বিশেষজ্ঞ ডেভিড অলব্রাইট যুক্ত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক কর্মসূচি সংক্রান্ত গবেষণা ও বিশ্লেষণে অলব্রাইটের মতামতকে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য মনে করে।

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান সামরিক তৎপরতা পুরো বিশ্বের জন্য বড় ধরনের অশান্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের রণতরী বিশাল সমাবেশ ও ইসরাইলের সামরিক হামলার প্রস্তুতি সন্দেহ নেই কোনো ভালো আলামত নয়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে  তার কমান্ডোদের জন্য ভাসমান ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের জন্য একটি মাদারশিপ পাঠানোর প্রস্তুতিও নিয়েছে। ইরানের সাথে বিরোধী ইয়েমেনে আল কায়েদার সম্ভাব্য হুমকি ও সোমালী দস্যুতার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সমর প্রস্তুতি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান বিরোধ এখন তুঙ্গে। এদিকে ইরান একা অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের নিয়ে প্রস্তুত। হরমুজ প্রণালি উন্মুক্ত রাখার নামে রণপ্রস্তুতি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনারই অংশবিশেষ। যুক্তরাষ্ট্র এরই মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে তার নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া। ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র একটি ছুতা মাত্র। তার উদ্দেশ্য ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বিশ্বের একমাত্র প্রতিবাদী আওয়াজকে স্তব্ধ করে দেয়া। ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে এমন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নেই। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান ইন্সটিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক বন্ধ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা ঘটেনি। কোনো যুক্তি যুক্তরাষ্ট্র মানতে রাজি নয়। কেননা তার মিত্র ইসরাইলকে সন্তুষ্ট করা এবং পরবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া ওবামার লক্ষ্য। কিন্তু ইরান ইরাক বা আফগানিস্তান নয় যে সহজেই তাকে পরাস্ত করা যাবে। বস্তুতপক্ষে ইরাকী তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর যুক্তরাষ্ট্রের লোলুপ দৃষ্টি এখন ইরানের অফুরন্ত তেল ভাণ্ডারের প্রতি। ইরানের ওপর সামরিক হামলা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের রাস্তা প্রশস্ত করবে যুক্তরাষ্ট্রকে তাই সংযমের পরিচয় দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্বের যা কিছু করণীয় তা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। মুসলিম উম্মাকে সম্মিলিতভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করা থেকে বিরত রাখতে শান্তিকামী বিশ্বকে একযোগে কাজ করতে হবে।

লেখক : কলামিস্ট ও বিশ্লেষক।

ঊসধরষ : সড়যরথধযসধফ১৫@ুধযড়ড়.পড়স

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।