আমি আমার স্বামীর জীবন নিয়ে শঙ্কিত : মিসেস সৈয়দা আফিফা আযম

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর বিশ্বখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ অধ্যাপক গোলাম আযমের সহধর্মিণী সৈয়দা আফিফা আযম স্বামীর জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। গত ২৭ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমি বিএসএমএমইউ এর প্রিজন সেলে আমার স্বামীর সাথে দেখা করেছি। কারা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সময়, বিকাল ৩টায় প্রিজন সেলের সামনে উপস্থিত হলে, খোলা আকাশের নিচে তারা আমাকে ১ ঘণ্টা  দাঁড় করিয়ে রাখে। ৮০ বছর বয়সের এ বৃদ্ধাকে বিলম্বের কারণ জানানোর মতো সৌজন্যবোধও তাঁরা দেখাননি।

তিনি বলেন, আজ আমার স্বামীকে দেখে আমি তাঁর জীবন নিয়ে অত্যন্ত শঙ্কিত। যে মানুষটি (আমার স্বামী) মাত্র ১৬ দিন আগে, গত ১১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে, নিজের পায়ে হেঁটে ৮ তলা বাসা থেকে গিয়ে গাড়িতে চড়ে কোর্টে হাজিরা দিতে গেলেন, আজকে সেই মানুষটিকে দেখে চেনাই যাচ্ছিল না। দুর্বলতার কারণে মুখ মলিন হয়েছিল। দু’জন লোক ধরে অনেক কষ্টে বিছানা থেকে উঠিয়ে বসাতে হয়েছে। কোনো বেলায়ই তিনি পেট পুরে খেতে পারছেন না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে থাকা সত্ত্বেও হাসপাতাল ও কারা কর্তৃপরে অবহেলা ও উদাসীনতা বিস্ময়কর। পরিমিত ও সুষম খাবারের অভাবে তিনি দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছেন ও দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে যে কোনো সময় যে কোনো ধরনের মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যাবার আশঙ্কায় আমি শঙ্কিত। আমি হাসপাতাল প্রশাসন ও কারা কর্তৃপরে নিকট তাঁর সুষম খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, একজন প্রায় ৯০ বছরের বৃদ্ধের শিশুর মতো পরিচর্যা ও সেবা-যতেœà¦° প্রয়োজন। অথচ, এ বয়সে, তাঁকে নিজের খাবারের প্লেটটি পর্যন্ত নিজে ধুয়ে নিতে হয়। তাঁর সাথে হাসপাতাল ও কারা প্রশাসন যে অমানবিক আচরণ করছেন তা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। তাঁর চাহিদা অনুযায়ী কোরআন, হাদিস, কোরআনের তরজমা ও তাফসীর বহু চেষ্টা, মৌখিক ও লিখিত আবেদনের পরেও গত ১৭ দিনে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। দু’সপ্তাহ থেকে নাপিতের ব্যবস্থা করার বহু অনুরোধ করেও নাপিত পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ এবং বহুবার মৌখিক ও লিখিত আবেদন করার পর মাত্র গত (২৬ জানুয়ারি) তাঁকে একটি ছোট আয়না ও এক শিশি মিষ্টি আচার দেয়া হয়েছে। হাসপাতাল ও কারা প্রশাসনের নিকট গত দু’সপ্তাহে ১০-১২টি দরখাস্ত জমা দেয়া হয়েছে। সেগুলোর অধিকাংশেরই উপর তাঁরা কোনো কার্যকরী পদপে গ্রহণ করেননি বা কোনো জবাব দেয়ারও প্রয়োজন মনে করেননি। উভয় প্রশাসনেরই পরিবারের সদস্যদের এড়িয়ে চলার প্রবণতা অত্যন্ত অসৌজন্যমূলক ও বেদনাদায়ক।

তিনি বলেন, আমরা যে ঘটনাটি জেনে সবচেয়ে বেশি শঙ্কিত তা হলো, গত পরশু (২৫ জানুয়ারি) গোসল করতে বাথরুমে গিয়ে দুর্বলতাজনিত কারণে তিনি প্রায় পড়ে যাবার উপক্রম হয়েছিলেন। সে অবস্থায় তিনি কোনো রকমে বাথরুমের মেঝেতে বসে পড়েন। এরপর প্রায় আধা ঘণ্টা পর্যন্ত তিনি হাঁটুতে ভর করে কমোড ও বেসিনের সাহায্য নিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত প্রহরীকে ডেকে তার সাহায্য নিয়ে উঠতে সম হন। মেঝের সাথে হাঁটুর ঘষাঘষিতে হাঁটুতে মারাত্মক জখম হয়। তাঁর ভাষায়, “ঐ দিনটি আমার জীবনের একটি কঠিনতম ও অসহায়তম দিন।”

তিনি বলেন, আমরা সার্বিকভাবে তাঁর জীবন নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। প্রশাসনের নির্বিকার মনোভাব, আচরণ এবং অবহেলা অত্যন্ত অমানবিক। আমরা এ পরিস্থিতির আশু সমাধান চাই।