শিবিরের ঢাকা অঞ্চল উত্তর ও দক্ষিণের শাখা দায়িত্বশীল সমাবেশ অনুষ্ঠিত

হত্যা করে মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলনকে দমানো যাবে না : শিবির সভাপতি

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. দেলাওয়ার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ আজ ক্ষমতায় টিকে থাকতে দেশব্যাপী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। সারাদেশে তারা এক চরম অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখতে চাইছে। যতই অপচেষ্টা করুক না কেন জনগণকে হত্যা করে কোনোভাবেই তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। হত্যা করে মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলনকে দমানো যাবে না।

তিনি গত ৩১ জানুয়ারি রাজধানীর এক মিলনায়তনে ছাত্রশিবিরের শাখা দায়িত্বশীল সমাবেশে (ঢাকা অঞ্চল উত্তর ও দক্ষিণ) সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন। শিবির সেক্রেটারি জেনারেল মো. আব্দুল জব্বারের পরিচালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন শিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আতিকুর রহমান, সাহিত্য সম্পাদক নিজামুল হক নাঈম, প্রচার সম্পাদক আবু সালেহ মো. ইয়াহইয়া, শিক্ষা সম্পাদক হাফেজ শাহিনুর রহমান, অর্থ সম্পাদক রফিকুল ইসলামসহ ঢাকা মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতিবৃন্দ।

শিবির সভাপতি বলেন, গত কিছুদিনে আওয়ামী সরকারের কর্মকাণ্ডে জাতির সামনে তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও রাজশাহীতে গুলি করে বিএনপি-জামায়াতের পাঁচ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। গণমাধ্যমের কল্যাণে বিশ্ববাসী দেখেছে কিভাবে পুলিশ নিহত ব্যক্তির লাশকে উলঙ্গ করে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে, নিহত জামায়াত কর্মীর লাশের ওপর বন্দুকের বাট ঠেকিয়ে রেখেছে। সরকারের দলন-পীড়নের এসব চিত্র যে ভয়ানক রূপ নিয়ে দেশবাসীর সামনে দেখা দিচ্ছে তাতে জনহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে চিনতে আর কারোর বাকি নেই। তারা ১৪ হাজার বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে যা কোনো সুস্থ মানসিকতার পরিচয় বহন করে না। জঘন্যভাবে তারা নিহত দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। ক্ষমতায় টিকতে তাদের ‘মত্ত হাতি’র অবস্থান তাই জনগণকে চূড়ান্তরূপে বিুব্ধ করেছে।

তিনি বলেন, সরকার সারাদেশে আজ ‘ইমারজেন্সি’ জারির মত পরিস্থিতি বহাল রেখেছে। সরকারের আচরণ প্রমাণ করেছে কারোর গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকারের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ নেই। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তারা দেশ পরিচালনায় সবদিক থেকে ব্যর্থতার পরিচয় দিলেও মানসিক রোগীর মতো আত্মতৃপ্তিতে ভুগছে। শেয়ারবাজারে সর্বস্ব হারিয়ে মানুষ আজ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এই আত্মহত্যা দেশের মহামারী আকার ধারণ করা অর্থনীতির পরিচয় বলে দেয়। যেভাবে সরকার দেশ পরিচালনা করছে তাতে এ সরকার ক্ষমতায় বাকি মেয়াদে টিকে থাকলে দেশ চূড়ান্তভাবে অকার্যকর হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, দলবাজির মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনের চিত্রও এ সরকার পাল্টে দিয়েছে। শাবিপ্রবিতে ছাত্রলীগ পুলিশের সরাসরি সহায়তায় যে নৃশংস কায়দায় শিবিরের ওপর হামলা, সাধারণ ছাত্রদের প্রায় একশ কক্ষে লুটপাট-ভাংচুর করেছে তা অবর্ণনীয়। সাধারণ ছাত্ররা এর বিপক্ষে শিবিরের ডাকা ধর্মঘটের পক্ষে অবস্থান নিলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আচরণ ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদেরই মদত যোগাচ্ছে। সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে তারা এটাকে জিইয়ে রেখে ছাত্রদের শিক্ষা জীবন বিনষ্টেরই পাঁয়তারা করছে। এটা শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র নয়, সারাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতেই ছাত্রলীগের তাণ্ডব, পক্ষপাতদুষ্ট পুলিশ ও প্রশাসন একই পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে। আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগকে দিয়ে পুলিশি সহায়তায় শিক্ষাঙ্গন থেকে শিবিরকে উৎখাত করতে চায়। শিবিরকে উৎখাত করা হলে দেশের শিক্ষাঙ্গন ছাত্র শূন্য হয়ে পড়বে। ছাত্রদের প্রাণের এ সংগঠন যদি ক্যাম্পাস ছাড়া হয় তাহলে ক্যাম্পাসই অচল হয়ে পড়বে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের জন্যই শিবিরসহ প্রত্যেক ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

গত দুই দিনের হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে শিবির সভাপতি বলেন, জামায়াত কর্মীসহ পাঁচ জনকে হত্যা করে সরকার তার হাত রক্তাক্ত করেছে। এই রক্ত পিপাসু আওয়ামী লীগ তাই কোনোভাবেই ক্ষমতায় টিকতে পারবে না। যে আন্দোলনে রক্ত ঝরেছে সে আন্দোলন সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে। সরকার আমাদের বড় প্রতিরোধ কর্মসূচির দিকে ঠেলে দিয়েছে। কাজেই শিবিরের ছাত্র-জনতাকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধ আন্দোলনে সরকার পতন অবশ্যম্ভাবী।  সমাবেশে শিবিরের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের শাখা সভাপতি ও সেক্রেটারিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।  প্রেস বিজ্ঞপ্তি