সংবাদ শিরোনামঃ

সমুদ্রে বাংলাদেশ পরাজিত হয়েছে ** গ্যুন্টার গ্রাসের কবিতা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে ** বিচারের নামে নির্যাতনের প্রতিবাদে জামায়াতের বিক্ষোভ ** সব কালো বিড়াল খুঁজে বের করতে হবে ** ১৭ এপ্রিল : স্বাধীন দেশের প্রথম সরকার গঠনের দিন ** সংবাদপত্রের পাতা থেকে ** উখিয়ায় ৩ শতাধিক চিংড়ি ঘের ভয়াবহ মড়কে আক্রান্ত ** আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে শিবির কর্মী মঞ্জু হত্যার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিােভ ** বড়াইগ্রামে রসুনের বিপুল ফলন ** শিবির কর্মী মঞ্জু হত্যার প্রতিবাদে বিােভ **

৭ বৈশাখ ১৪১৯, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৩, ২০ এপ্রিল ২০১২

ইসরাইল নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের কপটতা উন্মোচন

গ্যুন্টার গ্রাসের কবিতা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে

॥খন্দকার মহীউদ্দীন আহমদ॥

ইসরাইল বিশ্ব শান্তির অন্তরায় এবং বিশ্ব শান্তির জন্য কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন সত্য কথা বললেন সাড়া জাগানো নোবেল বিজয়ী জার্মান সাহিত্যিক গ্যুন্টার গ্রাস। কবিতা লিখে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন তিনি, বললেন অনেক আগেই তার এ কথা বলা উচিত ছিল। কিন্তু বলা হয়নি তাই বলে বলা হবে না এমন নয়। নয়টি পঙক্তিতে বিভক্ত ৬৯ লাইনের একটি কবিতার প্রবল শক্তি ও অসাধারণ সাধ্য করার ক্ষমতা দেখতে পেল বিশ্ববাসী। বিবেকের তাড়নায় গ্যুন্টার গ্রাস লিখেছেন, তিনি অপরাধের ভাগী হতে রাজি নন আর জার্মান জাতি যেন নিরাপরাধ মানুষ হত্যার দায়ে দায়ী না হয়। তার কবিতার পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য থেকে সুস্পষ্ট যে, তিনি বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছেন। ইরানের ওপর পরমাণু শক্তির অধিকারী জায়েনবাদ ইসরাইলের রণ হুঙ্কার, পরমাণু শক্তির অধিকার প্রশ্নে ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলোর ভণ্ডামী এবং সর্বশেষ ইসরাইলকে দেয়া অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জার্মান রণতরী এ নিয়েই মূলত তার কবিতা রচনা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মান সাহিত্যের পুনজ্জীবনে যে কয়জন জার্মান সাহিত্যিক অবদান রেখেছেন তাদের নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন  নোবেল বিজয়ী গ্যুন্টার গ্রাস। ৮৪ বছর বয়ষ্ক এই জার্মান সাহিত্যিককে বলা হয় জার্মান জাতির বিবেক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মান সাহিত্যকে বিশ্বজনীন রূপে রূপ দিতে তার নিরলস পরিশ্রম অনস্বীকার্য। ১৯৫৫ সালে তারই নেতৃত্বে বুদ্ধিজীবী ও সাহিত্যিকদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল গ্রুপ-৪৭। ১৯৫৯ সালে তার সারা জাগানো উপন্যাস টিন ড্রামে তার জন্মস্থান ডানজিগের যুদ্ধ সময়কালীন নাৎসিদের বর্বরতার কাহিনী লিখেই তিনি খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তার এই উপন্যাস ২৭টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে এবং বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বিবেকের তাড়নায় তিনি আবার কলম ধরেছেন। এবার তার লক্ষ্য ভেদ করেছে ইসরাইলী বর্বরতাকে। আর একই কারণে তিনি ঘায়েল করেছেন জার্মান জাতিকেও। কেননা তারাও অন্যায়ের সহযোগী। জায়েনবাদী ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের হাতে  তুলে দেয়া হয়েছে মানববিধ্বংসী অস্ত্র যার লক্ষ্য  হলো ইরান। যারা কাউকে আক্রমণ করেনি এবং বিশ্ব শান্তির প্রতি ইরান হুমকি নয়। তিনি জার্মানিসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের ইসরাইল প্রীতির নামে ভণ্ডামির সমালোচনা করেছেন। কেননা, তারা ইসরাইলী সম্প্রসারণবাদ ও আধিপত্যবাদকে প্রশ্রয় দিয়ে আসছে, যারা একদিকে ফিলিস্তিন অন্যদিকে ইরানকে আক্রমণের টার্গেট বানিয়ে রেখেছে।

‘যে কথা বললেই নয়’ কবিতায় গ্যুন্টার গ্রাস লিখেছেন, ‘যখন আরও অনেক দেশ এই পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হয়েছে আর আমার দেশ জার্মানি যুদ্ধজাহাজ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসরাইলের জন্য ডুবো জাহাজ তৈরি করেছে। তিনি লিখেছেন, ইসরাইল যে, ‘বিশ্ব শান্তির অন্তরায় তা আমি বলব’ অন্য জায়গায় তিনি বলেছেন, ‘ইহুদি রাষ্ট্রটিকে অবশ্যই ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে দেয়া হবে না, আমি আর নীরব হয়ে থাকবো না, ইসরাইলকে নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের ভণ্ড কপটতায় ভরা রাজনীতিতে কান্ত আমরা, আর দেরি নয়, এখনই তা বলতে হবে’। গ্যুন্টার বলেন, ‘এতদিন কেন চুপ মেরে আছি, কেন মুখ খুলেনি এত দীর্ঘদিন, একটা খেলা চলছে যুদ্ধ -যুদ্ধ খেলা, মহড়া চলছে প্রকাশ্য দিবালোকে। গ্যুন্টার গ্রাস খেলার নাম দিয়েছেন ‘আতর্কিতে হামলার অধিকার’। বলেছেন, হামলাকারী জনৈক বাচালের ডাকে সমাবেত, ইরানের জনজাতি ধূলায় মিশিয়ে দেবে কারণ তার সন্দেহ তারই ক্ষমতার বলয়সীমায় পরমাণু বোমা বানাচ্ছে ইরান। গ্যুন্টার বলেন, সারা দুনিয়ায় এই লুকোচুরি খেলা আমিও  মেরেছি চুপ, এই লুকোচুরির তলায়। আমার দেশ অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে সে, বহু বহুবার অপরাধ তার তুলনাবিহীন। তিনি বলেন, ইসরাইলকে আরো এক ডুবো জাহাজ বেচবে, দুনিয়া ধ্বংস করতে পারে এমন ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া যায়, জাহাজ থেকে ছোঁড়া যাবে সে দেশ পানে। গ্যুন্টার বলেন, আরো এক কারণে বলছি আজ, আমরা জার্মান জাতি অপরাধ ভারে নত হয়ে আছি, সামনে আরও এক অপরাধ ঘটতে যাচ্ছে, আর আমরাও হতে চলেছি তার ভাগদার সমান অপরাধী। ক্ষমা চেয়ে তিনি সত্য উচ্চারণ করছেন ‘মাফ করবেন আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না আজ, কেননা পশ্চিমা দুনিয়ার ভণ্ডামি দেখতে দেখতে আমি হয়রান, আশা করছি আপনারা মুখের কুলুপ খুলে নীরবতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হবেন। দেখতে পারছেন এগিয়ে আসছে বিপদ, যে দেশের কারণে হাত জোড় করে সে দেশকে বলুন, বল প্রয়োগ করবেন না, আর দাবি তুলুন দুই দেশের সরকারকে বলা হোক ইসরাইলী পরমাণু শক্তি আর ইরানি পরমাণু ক্ষেত্র দুইটাই থাক মহাজাতিক সঙ্ঘের অবাধ ও স্থায়ী নজরে।

ইসরাইলকে সমালোচনা করায় দারুণ ক্ষিপ্ত হয়েছেন ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তিনি কবিতাটির নিন্দা জানিয়েছেন এবং গ্যুন্টারের ইসরাইল প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। ইসরাইলী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও গোড়া অর্থডক্স ইহুদি নেতা এলি ইসাই বলেছেন, গ্যুন্টার গ্রাস তার কবিতায় ইসরাইল ও এর জনগণের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। এরপর তাকে ইসরাইলের পবিত্র মাটিতে ঢুকতে দেয়া হবে না। ইরানের পারমাণবিক অধিকার প্রশ্নে ইসরাইলসহ পশ্চিমা বিশ্বের কপটতায় জারিজুরি ফাঁস করে লেখা ঐ কবিতা প্রকাশের পর গ্যুন্টার গ্রাসের বিরুদ্ধে জার্মানিসহ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। জার্মান টলিভিশনের ৩টি চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে গ্যুন্টার গ্রাস সংবাদ মাধ্যমের একপেশে প্রোপাগাণ্ডার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইসরাইল যে বহুদিন থেকে পারমাণবিক শক্তিধর একটি দেশ এবং আন্তর্জাতিক অনেক নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না দৃশ্যত সেই আলোচিত বিষয়ই আমি তুলে ধরতে চেয়েছি আমার কবিতায়। তিনি বলেন, কবিতার তীব্র সমালোচনা হবে জেনেই আমি তা লিখেছি। গ্যুন্টার নিজ দেশ জার্মানির তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, জাতির কাঁধে দু-দু’টি বিশ্বযুদ্ধের দায়ভার রেখে তাদের উচিত নয় ইসরাইলের কাছে ডুবোজাহাজ বিক্রি করা। এদিকে জেরুজালেম হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মান ইতিহাস বিষয়ের শিক্ষক মেসে সীমার ম্যান বলেছেন, মূল আলোচনা থেকে সরে এসে গ্যুন্টার গ্রাসের বক্তব্যকে বেশি রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। জার্মান লেখক সংগঠন পেন কারোর সভাপতি লেখক যোয়াহ্যান হাস্টার গ্যুন্টার গ্রাসের কবিতার বিষয়বস্তুকে সমর্থন করে অবিলম্বে জার্মান সরকারকে ইসরাইল সাবমেরিন সরবরাহ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুডো ভেস্টারডেলে বলেছেন, ইসরাইল ও ইরানকে একই নৈতিকতার স্তরে রাখা বিচক্ষণ নয় বরং তা হবে উদ্ভট ও হাস্যকর।

বস্তুতপক্ষে জায়েনবাদ ও ইসরাইলী আগ্রাসী ভূমিকার যিনিই জার্মানিতে আলোচনা করতে চেয়েছেন তিনিই জার্মানিতে চরমভাবে অপমানিত হয়েছেন। ইতোপূর্বে ১৯৯৮ সালে জার্মান সাহিত্যিক মার্টিন ভালসার ও ইহুদিবাদের সমালোচনা করে তিনিও সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন। জার্মানিতে এই প্রথাকে ভাঙতে চেয়েছেন নোবেল বিজয়ী গ্যুন্টার গ্রাস। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ৮৪ বৎসর বয়সী এই জার্মান সাহিত্যিকও কবির এই কবিতাটি বাস্তব অর্থে ইসরাইলী অপতৎপরতা ইহুদিবাদ, বিশ্বশান্তি এবং ইরানের বিরুদ্ধে একপেশী হামলা ও পশ্চিমা চক্রান্তের বিরুদ্ধে চিন্তার দুয়ার উন্মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। ভিন্ন চিন্তা ও চেতনার রাস্তা খুলে দিয়েছি। জার্মানির ইহুদিবাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ গ্যুন্টার তাদের হয়ে তাদেরই বিরুদ্ধে কলম তুলেছেন এবং কলমের শক্তি কত প্রখর বুঝিয়েও দিয়েছেন। ১৯৫৯ সালে নাৎসী বর্বরতার ওপর গ্যুন্টারের লিখা উপন্যাস টিন ড্রাম যেমন বিশ্বব্যাপী বিবেককে নাড়া দিয়েছিল ঠিক তেমনই ২০১২ সালে ৫২ বছর পর ৮৪ বছর বয়সে জীবনের শেষ প্রান্তে গ্যুন্টারের সহজ ও সরল ভাষায় ‘যে কথা বলতেই হবে’ কবিতাটি বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। জায়েনবাদ এবং ইসরাইলী  আগ্রাসন, সম্প্রসারণবাদ ও ইরানের বিরুদ্ধে একপেশে নীতি নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ভিন্ন ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছেন গ্যুন্টারগ্রাস। ইসরাইল ইরান আক্রমণের যে হুঙ্কার দিচ্ছে তার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বাড়বে এটাই সকলের প্রত্যাশা।

লেখক : কলামিস্ট ও বিশ্লেষক। ঊসধরষ : সড়যরথধযসধফ১৫@ুধযড়ড়.পড়স

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।