সংবাদ শিরোনামঃ

সমুদ্রে বাংলাদেশ পরাজিত হয়েছে ** গ্যুন্টার গ্রাসের কবিতা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে ** বিচারের নামে নির্যাতনের প্রতিবাদে জামায়াতের বিক্ষোভ ** সব কালো বিড়াল খুঁজে বের করতে হবে ** ১৭ এপ্রিল : স্বাধীন দেশের প্রথম সরকার গঠনের দিন ** সংবাদপত্রের পাতা থেকে ** উখিয়ায় ৩ শতাধিক চিংড়ি ঘের ভয়াবহ মড়কে আক্রান্ত ** আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে শিবির কর্মী মঞ্জু হত্যার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিােভ ** বড়াইগ্রামে রসুনের বিপুল ফলন ** শিবির কর্মী মঞ্জু হত্যার প্রতিবাদে বিােভ **

৭ বৈশাখ ১৪১৯, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৩, ২০ এপ্রিল ২০১২

॥ মুনতাসির রহমান॥

দুর্নীতি ও অর্থ লুটপাটে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা এখন বেসামাল হয়ে পড়েছেন। সরকারের শেষ সময়ে এসে রীতিমতো লুটপাটের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন। কার চেয়ে কে বেশি অর্থের পাহাড় গড়বেন দৃশ্যত তারই খোলামেলা প্রতিযোগিতা চলছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে রাষ্ট্রের অর্থসম্পদ লুটপাটের মহোৎসব আগে কখনো তেমনটা লক্ষ্য করা যায়নি। কমবেশি সব সরকারের আমলে দুর্নীতি হলেও আওয়ামী লীগের এ ইতিহাস বিরল। স্বাধীনতার ৪১ বছরে আওয়ামী লীগ তিন দফায় ক্ষমতাসীন হয়। প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসে স্বাধীনতার পর। মধ্য ’৭৫ পর্যন্ত মোট সাড়ে তিন বছর তারা ক্ষমতায় ছিল। তখন দানের চাল, গম, আটা থেকে শুরু করে কম্বল পর্যন্ত চুরি করে বিক্রি করেছে। গ্রাম-গঞ্জের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে সরকারকে রিলিফ চোর বলতো। তাদের সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাটের কাহিনী জনগণের কাছে ধিক্কৃত হয়। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি অন্তত একটিবারের জন্য ক্ষমতায় আসতে চান। তার মায়াকান্না বা ক্ষমা চাওয়ায় জনগণ ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় বসায়। কিন্তু শেখ হাসিনা তার ওয়াদা রক্ষা করতে পারেননি। ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে এমন দুর্নীতি ও লুটপাট শুরু করে যে, দুর্নীতিতে বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করে। দুর্নীতির দুর্নাম বিশ্বব্যাপী জেনে যায়। দুর্নীতির এই রেশ পাঁচ বছর পর্যন্ত ছিল। তাদের আমলে দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় দুর্নীতি নামক অভিশাপ প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বস্তরে বিস্তার লাভ করে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিষ্ঠানের রূপ লাভ করে। যা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসার জন্য সেনা সমর্থিত তৎকালীন ড. ফখরুদ্দীন আহমদ সরকারের সঙ্গে গভীর ষড়যন্ত্র করে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতাসীন হয়েছে। এবারও প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শেখ হাসিনা। এখানে স্মরণ করা যেতে পারে যে, শেখ হাসিনা দুর্নীতির অভিযোগে সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ে জেলে যান। দুর্নীতির অভিযোগে জেলখাটার পরও দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে তিনি মুক্ত হতে পারেননি। বরং বলা যায়, এবার ক্ষমতায় এসে দুর্নীতির দুর্নামকে ষোলকলা পূর্ণ করতে চলেছেন। ক্ষমতার ৫ বছরের তিন বছরের বেশি সময় পার করেছেন। এই সোয়া তিন বছরে তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা দুর্নীতির রামরাজত্ব কায়েম করেছেন। টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, টিআর, কাবিখার চাল গম আত্মসাৎ, নিয়োগ বাণিজ্য, এমন কোনো অনিয়ম দুর্নীতি নেই যা তারা করছেন না। চাকরিতে শুধু নিয়োগই নয়, বদলি পদোন্নতিও ঘুষ ছাড়া হয় না। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, দলের নেতারা মোটা অঙ্কের ঘুষের লেনদেন করছেন। জেলে যাওয়ার ভয় ডর কিছু আছে বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না। অর্থাৎ দুর্নীতিকে ক্ষমতাসীন দল বৈধকরণ করেছে। যেটা ওপেনসিক্রেট। সম্প্রতি রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের এপিএস-এর অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনার পর সেটাই প্রতীয়মান হচ্ছে।

স্তম্ভিত à¦¸à¦•à¦²à§‡Ñ à¦†à¦“à§Ÿà¦¾à¦®à§€ লীগ ছাড়া

একের পর এক সরকারের মন্ত্রী সংসদ সদস্যদের সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনায় সারাদেশ আজ স্তম্ভিত। কিন্তু আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে পাতি নেতারা মোটেই স্তম্ভিত হননি। না হওয়ার প্রধানতম কারণ হলো আওয়ামী লীগ তার অতীতের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। সরকারি অর্থ সম্পদ লুটপাট করা তাদের পুরনো অভ্যাস। তারা যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবারই লুটপাট করেছে। এবারও সেটা করছে। পার্থক্য হলো অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে গিয়ে এবার দুর্নীতি লুটপাটের মাত্রাটাকে একটু বাড়িয়ে দিয়েছে। রাতের অন্ধকারে টাকা বস্তায় ভরে মন্ত্রীর বাসায় পাঠানো হচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে বিরল ঘটনা। যে ঘটনার জন্ম দিলেন শেখ হাসিনার মন্ত্রিপরিষদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও প্রবীণ সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। গত ৯ এপ্রিল গভীর রাতে মন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার ও রেলের পূর্বাঞ্চলীয় জেনারেল ম্যানেজার ইউসুফ আলী মৃধাসহ তিনজন রেল বাণিজ্যের ঘুষের টাকা ভাগবাটোয়ারার জন্য ৭০ লাখ টাকা (কোনো কোনো তথ্যমতে, টাকার অঙ্ক কয়েক কোটি) রেলমন্ত্রীর বাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু গাড়ির ড্রাইভারকে টাকার ভাগ না দেয়ায় সে গাড়িটি পিলখানা বিজিবির সদর দফতরে ঢুকিয়ে দিলে ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যায়। যদ্দূর জানা যায়, এই বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের নামে তোলা হয়। রেল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের নেতারা চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে টাকার উৎসের খবরটি ফাঁস করে দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, নিয়োগ বাণিজ্যের নামে প্রায় ১০ কোটি টাকা আদায় করা হয়। এর মূল হোতা জিএম ইউসুফ আলী মৃধা এবং তারই সহযোগী রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট এনামুল হক। আর মন্ত্রীর এপিএস হলেন মন্ত্রীর নিজস্ব প্রতিনিধি। সংবাদ সম্মেলনে সংগ্রাম পরিষদের নেতারা বলেছেন, নিয়োগ বাণিজ্য সম্পর্কে গত ১২ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়ে রেলমন্ত্রীকে জানানো হয়। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেননি। ব্যবস্থা না নেয়ার অর্থ হলো মন্ত্রী নিজেই এই নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। আর এ কারণে তার বাসাতে টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত হলেন শেখ হাসিনার মন্ত্রিপরিষদের সর্বশেষ তালিকাভুক্ত দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রী। এই তালিকা আরো লম্বা হবে যদি শেখ হাসিনা পুরো সময়টা  ক্ষমতায় থাকতে পারেন। এমন মন্তব্য রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের। এর আগে অর্থাৎ সোয়া তিন বছরে দুর্নীতির তালিকায় নাম লিখিয়েছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক বাণিজ্য ও বর্তমান বিমানমন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান, নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী দীলিপ বড়–য়া, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এছাড়া আওয়ামী লীগ দলীয় অন্তত একশ’ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধেও একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ আছে। প্রধানমন্ত্রীর ৭ উপদেষ্টার প্রায় সকলের নাম দুর্নীতির তালিকায় রয়েছে বলে জানা যায়। এরা সকলে ক্ষমতাসীন হলেও গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রয়েছেন। সৈয়দ আবুল হোসেন যোগাযোগ মন্ত্রী থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংক সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুতে তাদের অর্থ প্রদান স্থগিত করে। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরুর আগেই প্রাথমিক কাজে তিনি ব্যাপক দুর্নীতি করেন। তার দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দুর্নীতির কারণে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ বরাদ্দ বন্ধের ঘটনা এটাই প্রথম। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠলো তাকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে সরিয়ে দেয়ার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রধানমন্ত্রী তাকে না সরিয়ে বরং তার পক্ষে সাফাই গাইলেন এবং তাকে মন্ত্রণালয় পরিবর্তন করে ওবায়দুল কাদেরকে যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব দিলেন। সারাদেশের সড়ক মহাসড়কের বেহাল অবস্থা। এ খাত থেকে শত শত কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এবং দলের নেতারা লুটপাট করে খেয়েছেন। নদী খননের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের সঙ্গে মন্ত্রী শাজাহান খান জড়িত বলে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। টাকার বিনিময়ে অনেক দাগি আসামির মামলা তুলে দিয়েছেন আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। জেলা প্রশাসক এসপি, ম্যাজিস্ট্রেট মোটা অঙ্কের বিনিময়ে চাকরি দেয়া হচ্ছে। ডেসকোতে চলছে লুটপাটের রাজত্ব। এখানে আত্মীয়দের নিয়োগের হিড়িক চলছে। ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানির (ডেসকো) নিয়োগ বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। বর্তমান এই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জল হোসেন ক্ষমতাসীন দলের লোক। তিনি মোটা অঙ্কের বিনিময়ে নিয়োগ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মূল হোতা বিদ্যুৎ বিভাগের উপদেষ্টা। দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ সব সেক্টরে বিদ্যমান। মন্ত্রী-এমপি এবং সরকার সমর্থিত প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা যে যার মতো করে লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছেন। সব জায়গার দুর্নীতির খবর প্রধানমন্ত্রী জানেন কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই।

দলের মধ্যে হতাশা : মন্ত্রীদের দুর্নীতি ফাঁস হওয়ার পর দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ আছে। ক্ষোভ থেকে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। হতাশা এজন্য যে আগামী নির্বাচনে চরম ভরাডুবির আশঙ্কায়। নাম প্রকাশ করতে চাননি আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন মধ্যম সারির নেতা এ প্রতিনিধিকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা কে কি করছেন তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন। কিন্তু জানার পরও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। আগামী নির্বাচনের আর বেশি দেরি নেই। জনগণের সামনে ভোট চাইতে লজ্জা পেতে হবে। মে মাসে সিটি নির্বাচন হওয়ার কথা, নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চরম ভরাডুবি হবে। তেমন আলামত দেখা যাচ্ছে। এটা দলের জন্য খারাপ সঙ্কেত। তারা আরো বলেন, সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের কপাল খারাপ। তার পুকুর চুরির ঘটনা ফাঁস হয়ে গেল। এ রকম পুকুর চুরি আরো অনেকে করছেন। যাদের ঘটনা এখনও ফাঁস হয়নি। তবে মিডিয়ার বদৌলতে অনেকেই সুরঞ্জিত বাবু হয়ে যেতে পারেন।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।