সংবাদ শিরোনামঃ

সমুদ্রে বাংলাদেশ পরাজিত হয়েছে ** গ্যুন্টার গ্রাসের কবিতা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে ** বিচারের নামে নির্যাতনের প্রতিবাদে জামায়াতের বিক্ষোভ ** সব কালো বিড়াল খুঁজে বের করতে হবে ** ১৭ এপ্রিল : স্বাধীন দেশের প্রথম সরকার গঠনের দিন ** সংবাদপত্রের পাতা থেকে ** উখিয়ায় ৩ শতাধিক চিংড়ি ঘের ভয়াবহ মড়কে আক্রান্ত ** আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে শিবির কর্মী মঞ্জু হত্যার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিােভ ** বড়াইগ্রামে রসুনের বিপুল ফলন ** শিবির কর্মী মঞ্জু হত্যার প্রতিবাদে বিােভ **

৭ বৈশাখ ১৪১৯, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৩, ২০ এপ্রিল ২০১২

পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধী দল দলনে বেশি ব্যস্ত

অব্যাহতভাবে জনগণের জান-মাল ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে

॥ হারুন ইবনে শাহাদাত॥

সরকার বিরোধীদল নিপীড়নের মাধ্যমে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে ব্যস্ত। এ কাজে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করছে দলীয় কর্মীর মতো। রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানই এখন আর নিরপেক্ষ নেই, জনগণের জানমাল ইজ্জত রক্ষা নয় সরকারদলের নেতাকর্মীদের অন্যায় আবদার রক্ষাই তাদের এক নম্বর কাজ। রাজনীতি বিশ্লেষকগণ মনে করেন, বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করে একদলীয় শাসন কায়েমের লক্ষ্যেই তারা এমন ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ শাসন করছে। মহাজোট সরকারের গত তিন বছরে সারাদেশে প্রায় ৯ হাজার মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। ৬১২টি রাজনৈতিক খুন হয়েছে। চাঁদার দাবিতে শতাধিক ব্যবসায়ীর ওপর হামলা হয়েছে। এ সরকারের আমলে সারাদেশে প্রায় ৩৪ হাজার রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩০ হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মী।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এ সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় ৭ হাজার ১শ’ জনকে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী আখ্যায়িত করে মামলা থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। এদের বেশিরভাগই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। অন্যদিকে চাঞ্চল্যকর তিন হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ২৩ আসামির দণ্ডাদেশ মওকুফ করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। সূত্র জানায়, ২০০৯ ও ২০১০ সালের তুলনায় ২০১১ সাল জুড়েই গুম ও গুপ্তহত্যা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গণপিটুনির নামে পিটিয়ে মানুষ হত্যায় সৃষ্টি হয়েছে নয়া রেকর্ড। সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাদের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে দেশবাসী অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। ইভ টিজিংয়ের ঘটনা মাঝখানে কমে গেলেও পুনরায় তা বেড়ে গেছে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, পুলিশকে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে ব্যবহার না করে দলীয় লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব হচ্ছে না।

প্রথম টার্গেট ইসলাম ও ইসলামী দল : ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীন শাসন জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে সরকার ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সংবিধানের পরিবর্তন করে, সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা যোগ করেছে। দেশের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে বর্বর কায়দায় নির্যাতন করছে। দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামীদল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, আমীর ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লাকে ভিত্তিহীন মামলায় গ্রেফতার করে দুই বছর ধরে কারা নির্যাতন করছে। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর তাঁর বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাঁকে পায়নি। মাওলানা আবুল কালাম আযাদের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তিনি নামাজ পড়ার জন্য বের হয়ে যাওয়ার পর আর বাসায় ফেরেননি। সাদা পোশাকের পুলিশ তাঁর দুই ছেলে ও শ্যালককে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁদেরও খবর মিলছে না।

গত তিন বছরে ওপরে উল্লিখিত নেতৃবৃন্দ ছাড়াও গ্রেফতার হয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর একেএম নাজির আহমদ, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক তাসনীম আলম, এটিএম মাসুম, রফিউদ্দিন আহমদ, অধ্য ইজ্জতুল্লাহ, ঢাকা মহানগরী আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, রাজশাহী মহানগরী আমীর আতাউর রহমান, সেক্রেটারি আবুল কালাম আযাদ, খুলনা মহানগরী আমীর মিয়া গোলাম পরওয়ার, শিবিরের সাবেক সভাপতিসহ সারাদেশের ৩০ হাজারের মতো জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী। প্রত্যেককে জড়ানো হয়েছে একাধিক ভিত্তিহীন মামলায়। জেলখানায় বন্দি, বিদেশে সফররত এবং ও হাসপাতালে ভর্তি থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন মামলায় জড়ানো হয় অনেক নেতাকে।

একটি সূত্রে প্রকাশ, আটক নেতাদের মধ্যে জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩০টি মামলা দেয়া হয়েছে। আর দলের আমীর মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে ২২টি এবং অন্যদের বিরুদ্ধে কম-বেশি ১০-১৫টি করে মামলা দেয়া হয়েছে। ১০ থেকে ৪০ দিন পর্যন্ত রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের রেকর্ড ভঙ্গ করে এটিএম আজহার ও অধ্যাপক তাসনীম আলমের পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়। এরই মধ্যে পাঁচমাস থেকে দেড় বছর পর্যন্ত কারাভোগ করে জামিনে মুক্ত হয়েছেন একেএম নাজির আহমদ, অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, এটিএম মাসুম, রফিউদ্দিন আহমদ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, আতাউর রহমান, মিয়া গোলাম পরওয়ার, হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, আবুল কালাম আযাদসহ বেশ কয়েকজন নেতা।

ভিত্তিহীন বিভিন্ন মামলায় আটক জামায়াত নেতাকর্মীরা জজকোর্ট বা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও তাদের সহজে মুক্তি দিচ্ছে না পুলিশ। জামিনে মুক্তির সময় কারাগারের গেট থেকে আটক করে তাদের নতুন নতুন মামলায় জড়ানো হচ্ছে। সূত্রমতে, গত তিন মাসেই জেলগেট থেকে দু’শতাধিক নেতাকর্মীকে ফের আটক করে একাধিক মামলায় জড়ানো হয়েছে। এমনকি তাদের নতুন করে রিমান্ডেও নেয়া হচ্ছে। সব মামলায় জামিন পেলেও জেলগেট থেকে পুনরায় গ্রেফতার হয়ে নতুন মামলায় কারাগারে আটক রয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক তাসনীম আলম, অধ্য ইজ্জতুল্লাহসহ জামায়াত-শিবিরের অনেক নেতাকর্মী। সব মিলিয়ে সারাদেশে প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মী এখনও কারাগারে আটক আছেন। ফ্যাসিবাদী মহাজোট সরকার ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান, মহানগরী আমীর রফিকুল ইসলামসহ অনেক নেতাকর্মীকে প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে দিচ্ছে না। ইসলামী ঐক্যজোট নেতা মাওলানা ফজলুল হক আমিনীকে গৃহবন্দী করে রেখেছে। জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামী দলগুলোকে মিছিল মিটিং তো দূরের কথা ঘরোয়া বৈঠকও করতে দিচ্ছে না। এমন কি পারিবারিক অনুষ্ঠানে একত্রিত হলেও গোপন বৈঠকের ভিত্তিহীন অভিযোগে গ্রেফতার করছে। গ্রেফতারের নামে গুমও করছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি এই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র আল মুকাদ্দাস ও মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ ঢাকা থেকে বাসে করে কুষ্টিয়া যাচ্ছিলেন, সাভারের নবীনগর থেকে র‌্যাব তাদের গ্রেফতার করার পর আজ পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি।

গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুর থানার কাছে সাদা পোশাকধারী লোকেরা গাড়ি থামিয়ে নাজমুল ইসলামকে ধরে নিয়ে যায়। গাড়ির ভেতর বন্দিদশা থেকে তিনি এক সহকর্মীকে শুধু বলতে পারেন, আমাকে তো ধরে নিয়ে যাচ্ছে। নাজমুল ইসলামকে উদ্ধারের জন্য তার স্ত্রী ও অন্যরা থানা-পুলিশ-র‌্যাবের কাছে বললে কেউ এর কোনো দায়িত্ব নেয়নি। পরদিন গাজীপুর চৌরাস্তার কাছে তার লাশ পাওয়া যায়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় দুইজন শিবির কর্মী নিহত হলেও অপরাধীদের গ্রেফতার না করে শিবির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

প্রধানবিরোধী দল বিএনপির বিরুদ্ধে খড়গহস্ত : এ সরকার বেআইনিভাবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উৎখাত করেছে। তাঁর দুই ছেলেকে বিভিন্ন ভিত্তিহীন মামলায় জড়িয়ে বিদেশে নির্বাসনে রেখেছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপি, সাবেকমন্ত্রী আবদুল আলিম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন পিন্টুসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে দিনের পর দিন জেলহাজতে আটক রেখে নির্যাতন করছে।

সংসদে কথা বলতে দিচ্ছে না, রাজপথেও দাঁড়াতে দিচ্ছে না। বিএনপি নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর চৌধুরী আলমের এখনও হদিস মিলছে না। পুলিশ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসেবে, মহাজোট সরকারের গত তিন বছরে সারাদেশে প্রায় ৯ হাজার মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। ৬১২টি রাজনৈতিক খুন হয়েছে। চাঁদার দাবিতে অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ীর ওপর হামলা হয়েছে। এ সরকারের আমলে সারাদেশে প্রায় ৩৪ হাজার রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩০ হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে একের পর এক রাজনৈতিক নেতাসহ সাধারণ মানুষ ধরে নিয়ে যাওয়ার পর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাও বেড়েছে আশঙ্কাজনকহারে। এ সময়ে ১২৮০টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছে ৭১ জন। বিরোধীদলের হিসেবে এ সংখ্যা কম করে হলেও আরো দশগুণ বেশি।

নুনের চেয়ে খুনের দাম কম : পুলিশ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যান থেকে আরো জানা যায়, মহাজোটের তিন বছরে, ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেছে ৪০৪টি। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে হত্যাকাণ্ড, চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধ বেড়ে চলেছে। খোদ পুলিশের তথ্যেই অপরাধ বৃদ্ধির তথ্য ওঠে এসেছে। গত ১২ বছরে সারাদেশে প্রায় ৪০৪৭৯টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তাদের হিসাবমতে ২০১১ সালের তিন মাসে ৪৫২, ২০১০ সালে ৩৯৮৮, ২০০৯ সালে ৪২১৯, ২০০৮ সালে ৪০৯৯, ২০০৭ সালে ৩৮৬৩, ২০০৬ সালে ৪১৬৬, ২০০৫ সালে ৩৫৯২, ২০০৪ সালে ৩৯০২, ২০০৩ সালে ৩৪৭১, ২০০২ সালে ৩৫০১ ও ২০০০ সালে ৩৬৭৮টি হত্যা মামলা হয়েছে। এছাড়া গত ৫ বছরে ডাকাতি মামলা হয়েছে ১০,২২৮টি। এর মধ্যে ২০১১ সালে ২১১৫, ২০১০ সালে ১৭১৫, ২০০৯ সালে ২০৬২, ২০০৮ সালে ২৪৬৮ ও ২০০৭ সালে ২৩৪৫টি ডাকাতি মামলা হয়েছে। ১২ বছরে অপহৃত হয়েছেন ৮৪৭৪ জন। এর মধ্যে ২০১০ সালে ৮৭০, ২০০৯ সালে ৮৫৮, ২০০৮ সালে ৮১৭, ২০০৭ সালে ৭৭৪, ২০০৬ সালে ৭২২, ২০০৫ সালে ৭৬৫, ২০০৪ সালে ৮৯৮, ২০০৩ সালে ৮৯৬, ২০০২ সালে ১০৪০ ও ২০০১ সালে ৮৩৪টি অপহরণ মামলা হয়েছে। পুলিশের খাতায় ১০ বছরে সারাদেশে ৯০৮৫২টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২০১০ সালে ৮৫২৯, ২০০৯ সালে ৯১৭১, ২০০৮ সালে ১২১৮৮, ২০০৭ সালে ১২০১৫, ২০০৬ সালে ৮৩৩২, ২০০৫ সালে ৮১০১, ২০০৪ সালে ৮৬০৫, ২০০৩ সালে ৮২৩৪, ২০০২ সালে ৮২৪৫ ও ২০০১ সালে ৭৪৩২টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আগের তুলনায় অপরাধের মাত্রা কমে এসেছে। আসামিরাও গ্রেফতার হচ্ছে। এদিকে র‌্যাবের কর্মকর্তারা জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য র‌্যাব প্রশংসনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল বলেন, র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১২ সালের ১৮ই মার্চ পর্যন্ত ১১৭০০৯ জন অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকারের ৯৪৫৮টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২২৬১ জন অপরাধীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ৮৬২ জন নেতাকর্মীকে। এছাড়া ৩৭০ জন চরমপন্থি, ৭০ জন জলদস্যু, ২৪ জন বনদস্যু পাকড়াও হয়েছে। ১২৯৫ জন জালনোট ব্যবসায়ী, ২৩৬৯ জন চাঁদাবাজ ও জিনের বাদশা গ্রেফতার হয়েছে ১২৪ জন। এ সময়ে অপহৃত ব্যক্তি ও অপহরণচক্র গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে র‌্যাব ৬২৬টি অভিযান পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে ১১২০ জন অপহরণকারীকে গ্রেফতার ও অপহৃত ৭১০ ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করতে সম হয়েছে। অন্যদিকে লাশ উদ্ধার করেছে ২৮ ব্যক্তির। এছাড়া বিভিন্ন প্রতারণার ঘটনায় ১৭৬৬ জন প্রতারক, ৫২ জন ভুয়া ডাক্তার, ৩৯১ জন চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামি, ৮০ জন স্বর্ণালঙ্কার ডাকাত, ১৫৮ জন ভুয়া সেনা/নৌ ও পুলিশ, ২৯২ ভুয়া র‌্যাব সদস্য, ৪৯ জন ওএমএস চাল ব্যবসায়ী, ২৩২ জন যৌন হয়রানিকারী ও ১৮৫৭ জন অশ্লীল ভিডিও এবং পাইরেটেডে সিডি প্রস্তুতকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের সহযোগিতায় অপরাধ সংগঠনের প্রবণতা বেড়ে গেছে, যেমন, আমিনবাজারে গণপিটুনিতে ৬ কলেজ ছাত্র নিহত হওয়া। তদন্তে উঠে এসেছে, পুলিশের সহায়তায় স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা কলেজ ছাত্রদের হত্যা করেছে। ঢাকার লিখেতে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা পুলিশকে পিটিয়ে অস্ত্র লুট করার ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। বহাল তবিয়তে রয়েছে মামলার আসামিরা।

গত বছরের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার পুরাতন জমাদ্দারহাটের সেতু থেকে নিরপরাধ কলেজছাত্র লিমনকে ধরে পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে র‌্যাব। পরে চিকিৎসকরা তার বাম পা কেটে ফেলেন। এই ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি রিপোর্টও জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। গত ২০১১ সালের ১৫ জুলাই ঢাবির মেধাবী ছাত্র আবদুল কাদেরকে দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার করে খিলগাঁও থানা পুলিশ। পরে তাকে ছিনতাইয়ের মামলা ঢুকিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। থানার ওসির কে চাপাতি দিয়ে তার পায়ের তলা কেটে দেয়া হয়। গত বছরের ২৭ জুলাই নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে ডাকাত সন্দেহে ছয়জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তার মধ্যে টেকেরহাট মোড়ে মিলন নামে এক কিশোরকে পুলিশের সামনেই স্থানীয়রা পিটিয়ে হত্যা করে। গত বছরের ৫ জুন রাজধানীর ধানমন্ডিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা মনজুরকে তার স্বামী হাসান সাঈদ কর্তৃক নির্যাতনের ঘটনা আলোচনায় ওঠে। নির্যাতনের ফলে রুমানা দুই চোখের দৃষ্টি হারান। পরে হাসান সাঈদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর কারা হেফাজতে মারা যান হাসান সাঈদ।

মহাজোট আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় ৭১০০ জনকে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী আখ্যায়িত করে মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। যাদের নাম প্রত্যাহার করা হয়েছে বেশির ভাগ আসামির বিরুদ্ধেই হত্যাসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে। একই সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় তিনটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ২৩ আসামির মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করা হয়েছে। তার মধ্যে নাটোরে যুবদল নেতা সাব্বির আহম্মদ গামা হত্যা মামলায় ২১ জন ও লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম হত্যা মামলায় একজন, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক হত্যা মামলার প্রধান আসামি আহসান হাবীব টিটুর দণ্ড মওকুফ করেন প্রেসিডেন্ট। এ সরকারের আমলে ডাবল মার্ডার, ট্রিপল মার্ডারসহ ৯ হাজার ১০৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে আলোচিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নরসিংদী পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা লোকমান হত্যাকাণ্ড। ১ নভেম্বর নরসিংদীর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে তিনি নিহত হন। ১৪ ডিসেম্বর যশোর জেলা বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও ঝিকরগাছা উপজেলা সভাপতি নাজমুল ইসলাম ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে অপহৃত হন। পরদিন গাজীপুরের দণি সালনা এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর জুরাইন কমিশনার রোডে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে কদমতলী শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ ও তার গাড়িচালক হারুন-উর রশিদকে। ১৪ই জানুয়ারি ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক ওরফে ফজলুকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ১৬ অক্টোবর রংপুর মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা খাদ্য ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সাজিদ পারভেজ যাদুকে হাত-পায়ের রগ কেটে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গত বছরের ১ ডিসেম্বর ফার্মগেট থেকে অপহৃত হন জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর (উত্তর) কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও ক্যান্টনমেন্ট থানার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক খান ওরফে দীপু। পরে ধামরাই থেকে তার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। তাছাড়া বাসা, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরি ও ডাকাতির ঘটনা কমছে না। রাজনৈতিক সহিংসতায় ৩০ হাজার নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ছাত্র নেতা শামীম এবং উত্তরার ঝুট ব্যবসায়ী আবদুল হালিম, মিরপুরের আবদুল করিম হাওলাদার নিখোঁজ হওয়ার পর তাদের খোঁজ মিলছে না। গত বছরের ১৯ অক্টোবর রাজধানীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী নূর মোহাম্মদ, তার জামাতা আবদুল মান্নান ও বন্ধু ইকবালকে র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ করা হয়। গত বছরের ২৮ নভেম্বর রাজধানীর হাতিরপুল থেকে একসঙ্গে ছাত্রদল নেতা শামীম হাসান সোহেল, ইসমাইল হোসেন ওরফে আল আমিন ও মাসুম হোসেনকে অপহরণ করা হয়। তাদের মধ্যে মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী থেকে ইসমাইলের লাশ উদ্ধার হলেও বাকি দু’জনের হদিস পাওয়া যায়নি। গত বছর ৩১ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জ এলাকা থেকে জুয়েল, রাজীব ও মিজান নামে তিন তরুণকে ডিবি পরিচয়ে অপহরণ করা হয়। গাজীপুর ও মুন্সীগঞ্জ এলাকায় তাদের লাশ পাওয়া যায়।

বিশ্লেষকগণ মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের কারণে পুলিশের নৈতিকমান ও কর্মদক্ষতা কমছে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার চেয়ে রাজনৈতিক নেতাদের খুশি করার অপকর্মে বেশি ব্যস্ত থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি ঘটছে।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।