সিলেটে বেপরোয়া ছাত্রলীগ

১৮টি দোকান লুটপাটের পর দু’গ্রুপের সংঘর্ষ

সিলেট সংবাদদাতা : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সিলেটে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ছাত্রলীগ ক্যাডারদের কাছে সিলেট রেঞ্জ পুলিশ এবং এসএমসি পুলিশ বড়ই অসহায়। পুলিশের সামনে দেশী-বিদেশী অস্ত্র উঁচু করে ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডার পিযুষ কান্তির নেতাকর্মী এবং তার প্রতিপক্ষরা প্রতিনিয়ত নগরীতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলছে। পুলিশ এ সমস্ত অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে এলাকা থেকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়। নগরীবাসীর প্রশ্ন সিলেটের ছাত্রলীগ ক্যাডাররা কি আইনের ঊর্ধ্বে। গত ২২ মার্চ রোববার রাত পৌনে ৯টার দিকে পিযুষ গ্রুপ ও কাশ্মির গ্রুপের মধ্যে নগরীর জল্লারপাড় এলাকায় সংঘর্ষ বাধে। এ সময় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। অগ্নিসংযোগকালে পুলিশকে অসহায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

গত ২০ মার্চ রাতের অন্ধকারে রেজিস্ট্রারি অফিস ও গণপূর্ত ভবনে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ব্যাপক ভাঙচুর করে। পিযুষ কান্তি দে ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপর্যুপরি ককটেল বিস্ফোরণের মধ্যে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা তালতলা এলাকা। কয়েকটি মোটর সাইকেল ও ভ্যান গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ক্যাডাররা। এ দিনও পুলিশের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। গত ২০ মার্চ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সিলেটের অভিজাত এলাকা নামে খ্যাত নগরীর উপশহরস্থ তেররতন এলাকায় ছাত্রলীগের ইকবাল ও দুলাল গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাধে। ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা এই এলাকায় ১৮টি দোকানে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ চলাকালে ১৮টি দোকান থেকে নগদ টাকাসহ ২ লক্ষ টাকার মালামাল লুটপাট করেছে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। তাদের হামলায় ৫ জন ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন।

এসএমপির এডিসি (দক্ষিণ) জেদান আল মুসা ১৮টি দোকান লুটপাটের ঘটনা এবং সংঘর্ষের খবর নিশ্চিত করে জানিয়েছিলেন কেউ মামলা দিলে পুলিশ মামলা গ্রহণ করবেন। কিন্তু আজ ৪ দিন অতিবাহিত হবার পরও ছাত্রলীগ ক্যাডারদের বিরুদ্ধে আজও কোনো মামলা হয়নি।

এদিকে ২২ মার্চ রোববার রাত পৌনে ৯টার দিকে নগরীতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় মোটর সাইকেল পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। উভয় গ্রুপের সংঘর্ষ চলাকালে একটি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয় ও রাতুল প্লাজার গ্লাস ও চায়ের দোকানে ভাংচুর করা হয়। জানা গেছে, অধিপত্য বিস্তার নিয়ে পীযুষ গ্রুপ ও পারভেজ গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছিল সন্ধ্যার পর থেকেই। রাত সোয়া ৮টার দিকে রাতুল প্লাজার সামনে পারভেজ গ্রুপের একটি পালসার মোটর সাইকেলে আগুন দেয় অপর গ্রুপ। এ সময় জিন্দাবাজার-জল্লারপাড় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর কিছু পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পুড়ে যাওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার করে নিয়ে যায়। আবারও দেড় ঘণ্টা পর পারভেজ গ্রুপের নেতাকর্মীরা মিছিল করে। মিছিল থেকে আগুন দিয়ে জিন্দাবাজার-জল্লারপাড় রোডে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। প্রায় ২০ মিনিট পর স্থানীয়রা ও পুলিশ গিয়ে আগুন নিভিয়ে রাস্তা খুলে দেয়। এর কিছু সময় আগে মিছিল থেকে টাইগার ফোর্সের দু’সদস্যকে ধাওয়া করে বলে পুলিশের এক সূত্র জানায়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে পুলিশ জিন্দাবাজারস্থ পানসি হোটেল সংলগ্ন মেইন রাস্তায় অবস্থান নেয়।

অপর এক সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ জিন্দাবাজারে অবস্থানকালে মির্জাজাঙ্গালের তপশীল ছাত্রাবাসের কাছে পীযুষ গ্রুপের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়। এ ব্যাপারে পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. রহমত উল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় একটি মোটরসাইকেল পোড়ানো হয়েছে। এ ব্যাপারে পারভেজের সাথে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া না গেলেও পিযুষ কান্তি জানান, তিনি বা তার গ্রুপের সদস্যরা এই এলাকায় ছিলেন না। ছাত্রলীগের ঘন ঘন সংঘর্ষ ও মোটরসাইকেল পুড়িয়ে নাশকতা সৃষ্টি করায় নগরবাসীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।