সংবাদ শিরোনামঃ

মহাবিপর্যয়ের দিকে বাংলাদেশ ** সংবিধান সংশোধনের নামে এমন কিছু করা ঠিক হবে না যা জাতিকে আরো বিভক্ত করে মুখোমুখি হতে প্রণোদিত করে ** রাজনৈতিক নিপীড়নের উদ্দেশ্যেই মুজাহিদকে শ্যোন অ্যারেস্ট ** পশ্চিমবঙ্গে লাল দুর্গের পতন ** জামায়াত গণমানুষের অধিকারের কথা বলে তাই সরকার নেতৃবৃন্দের উপর দলন-পীড়ন চালাচ্ছে ** সাহসী বুকে অব্যাহত থাকুক এ পথচলা ** বিসমিল্লাহ বর্জন : হিন্দুত্ববাদের অধীনস্থ করাই ল্য ** প্রচারের অভাবের পরেও ডাক বিভাগের মোবাইল মানিঅর্ডার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ** গ্রামের পতিত জমিতে সূর্যমুখী ও কৃষকের হাসি ** গ্রাহাম ই ফুলারের ইসলামবিহীন পৃথিবী **

ঢাকা শুক্রবার ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৩২, ২০ মে ২০১১

ড. মো. জাহিদুল ইসলাম
সলাখো সমস্যার ঘূর্ণাবর্তে নিপতিত বর্তমান বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সমস্যা হলো সন্ত্রাস। সন্ত্রাস আজ সমাজ ও রাষ্ট্রের এক মরণ ব্যধিতে পরিণত হয়েছে। সন্ত্রাস মানে প্রতিপকে ঘায়েল করা, পঙ্গু করা, অধিকার হরণ, প্রতিশোধ গ্রহণ, তথা হত্যা, ধ্বংস, লুণ্ঠন, জিঘাংসা, রাহাজানি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, জ্বালাও-পোড়াও ইত্যাদি। পারস্পরিক সম্পর্কের টানাপড়েন ও স্বার্থান্ধতা থেকেই জন্ম নেয় এক ধরণের বিকৃত মানসিকতা, যার সর্বশেষ পরিণতি দাঁড়ায় সর্বসংহারী সন্ত্রাস। নৈতিক অবয়, প্রগতির নামে কুসংস্কার লালন ইত্যাদিও সন্ত্রাস সৃষ্টিতে সহায়ক। অন্য দৃষ্টিতে সন্ত্রাসের উৎপত্তি রাজনৈতিক শক্তি বিস্তারের উগ্র বাসনা থেকে। রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে এ সমস্ত সন্ত্রাসীদের লালন করা হয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। এদেরকে টেন্ডার সুবিধা, সম্পত্তি দখল, অবৈধ অস্ত্র প্রদান, ড্রাগ ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চোরাকারবারীসহ বিভিন্ন অবৈধ সুযোগ প্রদান করে রাজনৈতিকভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়। ফলে সন্ত্রাসীরা কোন ভেদ বিচার না করেই ভয় ভীতি প্রদান ও মানুষ হত্যা করে চলে, এ েেত্র তারা সামরিক বা বেসামরিক কোন ল্য বস্তুর ধার ধারে না; কোন ধর্ম, আইন বা নীতি আদর্শের পরওয়া করে না। পুলিশী এ্যাকশন ও মামলা মোকদ্দমার েেত্র এরা থাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। প্রকাশ্য দিবালোকে, হাটে-বাজারে, জন-সমাবেশে, রাজপথে, শিাঙ্গনে অস্ত্র ব্যবহার করে, বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে এবং অদৃশ্য শক্তির ইশারায় এরা সমাজে হিরো হয়ে দাপটের সাথে ঘোরাফেরা করে। সমাজের এই অনাকাক্সিত পরিবেশ-পরিস্থিতিতে গোটা জাতির সীমাহীন শঙ্কা ও উদ্বেগ সন্ত্রাসীদেরতো নয়ই, এদের যারা লালন করেন তাদের মনেও কোন রেখাপাত করে না। প্রতিশোধ, আর জিঘাংসায় রক্তের হোলিখেলায় মেতে ওঠে সবাই।

সমাজ ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সন্ত্রাসের এই ব্যাপকতা সম্প্রতি গোটা বিশ্বকে ভাবিয়ে তুলছে। বিভিন্ন সম্মেলনে, সুপারিশমালায়, সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে, আলোচনায়, লেখনীতে, মিডিয়া জগতে সন্ত্রাসের কারণ, এর উৎপত্তি, প্রকৃতি, অর্থের উৎস, কুফল, প্রতিকার ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়ে আসছে। সন্ত্রাস বিস্তৃত বর্তমান বিশ্বে সন্ত্রাস নির্মূলের সার্বিক প্রচেষ্টা ও অকান্ত পরিশ্রম অব্যাহত রয়েছে। কোটি কোটি ডলার বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে এ খাতে। সামরিক প্রতিষ্ঠান, সমরবিদ্যা কেন্দ্র, বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, পুলিশ কন্ট্রোল রুম, গোয়েন্দা সংস্থা সন্ত্রাস প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন গবেষণা, চিন্তা, প্রক্রিয়া, পদ্ধতি, নীতি নির্ধারণী বৈঠকসহ বিভিন্নধর্মী প্রচেষ্টায় ব্যতিব্যস্ত।

আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে ল্য করছি, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস দমনের যে হাজারো প্রচেষ্টা, তা শুধু ব্যর্থতার হাতছানি দিয়েই ফিরছে। কেউ কেউ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাতে ব্যস্ত। তবে হাজার হাজার বছর ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে যে মানববিধ্বংসী সন্ত্রাস চলছে তার সমাধান কি? দমনের সঠিক কর্মপদ্ধতিই বা কি? এ ব্যাপারে ভাবনার অবকাশ রয়েছে। মানব সভ্যতার ঐতিহ্যগত সঞ্চিত প্রজ্ঞাসম্ভার যেখানে, সেখানেই আমাদেরকে অনুসন্ধান করতে হবে সন্ত্রাস মোকাবিলার সঠিক পদ্ধতি। মানব সভ্যতার ইতিহাস খুঁজলে আমরা পাব এর সঠিক উদাহরণ। পৃথিবীর প্রারম্ভিক যুগ থেকে আজ পর্যন্ত বিশ্ব সভ্যতা-সংস্কৃতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমাদের সামনে প্রতীয়মান হয়, একটি মাত্র আদর্শ স্বীয় প্রজ্ঞা প্রদর্শিত পন্থায় সমস্যাটির সর্বোচ্চ পর্যায়ের অবনতির মোকাবিলায় পুরোপুরি সাফল্য অর্জনে সম হয়েছে। আর এ সাফল্য আসে অতি অল্প সময়ে, এক জীবদ্দশায়ই। সাফল্যমণ্ডিত কার্যকর এই আদর্শের নাম হলো ইসলাম, যা এসেছে সমগ্র বিশ্বের মালিক মহান আল্লাহ্র প থেকে; মানবতার মুক্তি দূত সভ্যতার বাহক মুহাম্মদের (সা.) মাধ্যমে।

খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকের সে মহাতমসাচ্ছন্ন যুগে পৃথিবীর বুকে আলোর দিশারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন রাসূল (সা.), যখন গোটা পৃথিবী নৈতিক অবয়ের চরম শিখরে উপনীত হয়েছিল। ব্যক্তি, পরিবার, বংশ, সমাজ, রাষ্ট্র সকল পর্যায়ে চলছিল সন্ত্রাস, জিঘাংসা, হত্যা, লুণ্ঠন, প্রতিশোধ আর আত্মশ্লাঘার প্রতিযোগিতা। মদ, নারী ও যুদ্ধ ছিল মানব মনের সবচেয়ে আকাঙ্খিত বস্তু। এমনই এক দুঃসময়ে সমাজ ও রাষ্ট্র বিধ্বংসী সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটন ও প্রতিরোধকল্পে মুহাম্মদ (সা.) এক কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। যুগোপযোগী, সময়োচিত ও বাস্তবমুখী এরূপ কার্যকরী পদেেপর দরুন একদিকে যেমনি সমাজ থেকে সন্ত্রাস নির্মূল হয়ে গিয়েছিল, অপরদিকে সন্ত্রাসীদের করুণ পরিণতি অবলোকনে কেউ এই ঘৃণ্য পথে পা বাড়ানোর সাহস পায়নি। ফলে রাসূল (সা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র পরিণত হয় দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবিহীন এক শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল কল্যাণ রাষ্ট্রে। আমরা এ পর্যায়ে রাসূলের (সা.) সেই সাফল্যজনক কার্যকর পদপে আলোচনার প্রয়াস পাব।

রাসূল (সা.) মদীনায় হিজরত করে শান্তি-শৃঙ্খলা সংরণ এবং অন্যায়-অত্যাচার ও সন্ত্রাসবাদ উচ্ছেদে বিরাট অবদান রাখেন, তিনি সেখানকার ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেন, যা ইতিহাসে মদীনা সনদ নামে খ্যাত। সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বিধানের ল্েয দুর্নীতি ও সন্ত্রাস নির্র্র্মূলের এক প্রামাণ্য দলীল এ সনদ। সনদের ১৩ নম্বর শর্তে উল্লিখিত হয়েছে যে, খোদাভীরু ঈমানদারদের ঐক্যবদ্ধ হস্ত ঐ সকল ব্যক্তির বিরুদ্ধে উত্থিত হবে যারা বিদ্রোহী, বিদ্বেষপোষণকারী, অত্যাচারী, সীমালঙ্ঘনকারী এবং দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসী। এ েেত্র সকলে সমভাবে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, যদি কারো নিকটাত্মীয় এমনকি পুত্রও হয়। সনদের ২১ নং শর্তে বলা হয়েছে, ঈমানদার ব্যক্তিকে কেউ ইচ্ছাকৃত হত্যা করার পর স্যা প্রমাণে তা প্রমাণিত হলে তার উপর কিসাস গ্রহণ করা হবে।

ইসলাম ও সন্ত্রাস শব্দ দুটি ভাবার্থের দিক দিয়ে এবং কার্যত পরস্পর সাংঘর্ষিক। সন্ত্রাসের স্থান ইসলামে নেই, বরং ইসলামের আবির্ভাব হয়েছে সন্ত্রাস, অরাজকতা, জুলুম, শক্তির মহড়া, ছিনতাই, লুণ্ঠন, হত্যা, রাহাজানি ইত্যাদি মানবতা বিধ্বংসী কার্যক্রম সমূলে উৎখাত করে কাক্সিত কল্যাণমুখী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য। মহান আল্লাহ এ সম্পর্কে বলেন, “তোমরা হলে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ জাতি। মানবতার কল্যাণের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখবে” (আলে ‘ইমরান: ১১০)।

যুগ যুগ ধরে মানব সমাজে সন্ত্রাস নামক যে ধ্বংসলীলা বিদ্যমান, ইসলাম একে ফিতনা ও ফাসাদ নামে অভিহিত করেছে। পবিত্র কুরআনুল কারীমে শব্দদুটি যথাক্রমে ৩৪ ও ৪৯ বার বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্ন অর্থে উল্লিখিত হয়েছে। অধুনা বিশ্ব যাকে ঞবৎৎড়ৎরংস বা সন্ত্রাসবাদ নামে আখ্যায়িত করেছে। আল্লাহ তা‘আলা এই সন্ত্রাসকে সমূলে বিনাশ করার ল্েয নির্দেশ দিয়ে বলেন, “তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাক, যে পর্যন্ত না ফিতনা নির্মুল হয় এবং দ্বীন শুধু আল্লাহরই জন্য হয়ে যায়” (বাকারাহ: ১৯৩)। এ প্রসংগে আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্চনা আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি (আল-মায়িদাহ্: ৩৩)।

হত্যা, সন্ত্রাস, জিঘাংসা, নির্যাতন নয়, পারস্পরিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি, সহানুভূতি, সহনশীলতা, জীবনের নিরাপত্তা দানের শিা দেয় ইসলাম। মহান আল্লাহ এ সম্পর্কে বলেন “যে কোন মানুষকে খুনের বদলে বা যমিনে ফিতনা সৃষ্টি ছাড়া অন্য কোন কারণে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করে, সে যেন সকল মানুষকে হত্যা করল। আর যে ব্যক্তি (অন্যায় হত্যার কবল থেকে) একটি জীবন রার ব্যবস্থা করল, সে যেন সমগ্র মানব জাতিকে রা করল।” (আল-মায়িদাহ: ৩২)।

শুধুমাত্র মুসলমানদেরই নয়, অমুসলিমদের ইজ্জত-আবরু, সম্পদ ও জীবন সংরণেও ইসলাম স্থাপন করেছে এক নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত। বহুজাতীয় সমাজে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষ কিভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে একই সমাজে বসবাস করবে? তার সঠিক পন্থা একমাত্র ইসলামই প্রণয়ন করেছে। সংখ্যগুরু ও সংখ্যালঘু বিবেচনায় জাতি বিভাজনের মাধ্যমে হত্যা, সন্ত্রাস, লুণ্ঠনের কোন অবকাশ ইসলামে নেই। মহান আল্লাহ এ সম্পর্কে বলেন, “কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে ইনসাফ বর্জনে প্ররোচিত না করে। ন্যায় বিচার কর। এটাই আল্লাহ ভীতির অধিক নিকটবর্তী। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে সম্যক অবহিত” (আল-মায়িদাহ: ৮)।

অমুসলিমদের অধিকার সংরণ ও নিরাপত্তা বিধান করার প্রতি গুরুত্বারোপ করে শান্তির দূত মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ (সা.) বলেন, “কোন মুসলমান যদি কোন অমুসলিম নাগরিকের উপর নির্যাতন চালায়, তার অধিকার খর্ব করে, কোন বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়, তাহলে হাশরের ময়দানে আমি তার বিরুদ্ধে অমুসলিম নাগরিকের প অবলম্বন করব” (আবু দাউদ)। একটি নবজাতকের আগমন ঘটে নিষ্পাপ নিষ্কলুষ জীবন নিয়ে। অথচ পারিপার্শ্বিক পরিবেশগত কারণে কৈশোর ও যৌবনের উদ্দামতায় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে সে। ফলে ণে ণে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িয়ে ফেলে নিজেকে। এর জন্য দায়ী ঐ শিশুর পিতা-মাতা, সমাজ, শিা ব্যবস্থা। রাসূল (সা.) এ প্রসঙ্গে বলেন, “প্রতিটি নবজাতক স্বীয় স্বভাবধর্ম নিয়েই জন্ম লাভ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইয়াহুদী বানায়, খ্রিস্টান বানায় অথবা অগ্নিপূজক বানায়” (বুখারী)। তাই একটি শিশুকে সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য দরকার সঠিক অভিভাবকত্ব, পারিবারিক ভারসাম্য, নৈতিক আদর্শ সম্বলিত শিা প্রদান, সামাজিক অধিকার এবং সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ। এ েেত্র রাসূলের (সা.) নির্দেশ সম্বলিত উক্তি প্রণিধানযোগ্য; তিনি বলেন, “তোমাদের সন্তানদের সাথে সম্মানবোধের মাধ্যমে আচরণ কর এবং তাদেরকে শিষ্টাচার ও মূল্যবোধ শিা দাও” (মিশকাত)।

উপর্যুক্ত বাণী ও নির্দেশের ন্যায় বহু নির্দেশ, সুপারিশ মালা এবং কার্যকরী ব্যবস্থা ইসলামে বিদ্যমান। যার বাস্তব প্রয়োগ দেখিয়ে মহানবী (সা.) প্রমাণ করেছেন, পৃথিবী থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করে একটি সুখী সমৃদ্ধ সমাজ উপহার দেয়া সম্ভব। একথা সতঃসিদ্ধ যে, ইসলামের যাবতীয় কার্যকরী পদপে সকল যুগের, সকল পরিবেশের, সকল মানুষের। তাই সন্ত্রাস নির্মূলে ইসলামের গৃহীত পদপে বর্তমান পরিস্থিতিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সম। তাই আমাদের অনুরোধ, বড় বড় বাজেটের গবেষণা নয়, অতিব্যস্ত প্রশাসনের হতাশা নয়, বিশ্ব পরিমণ্ডলের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ্র বাণীর দিকে এবং রাসূলের (সা.) গৃহীত পদেেপর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন, পদপে নিন।

বর্তমান বিশ্বে সন্ত্রাস নির্মূলের এ পর্যায়ে আমরা বাংলাদেশের পরিবেশ-পরিস্থিতির আলোকে নিম্নবর্ণিত সুপারিশ মালা প্রণয়ন করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।

১. আত্মবিস্মৃত যুবসমাজকে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনধারায় ফিরেয়ে আনার জন্য রাসূল (সা.) প্রদর্শিত প্রক্রিয়ায় মানসিক পরিচর্যা করা। পাশাপাশি কুরআন-হাদীসের ব্যাপক চর্চা ও লালন সমাজে প্রতিষ্ঠা করা।

২. রাজনৈতিক হস্তপে পরিহার করে আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীকে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া।

৩. প্রকৃত সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। এ েেত্র আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত আল-কুরআনের বিধানানুযায়ী শাস্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে।

৪. নৈতিক ও ধর্মীয় শিার বিকাশ সাধনে উপযুক্ত সিলেবাস প্রণয়ন ও পুস্তক রচনা করা।

৫. প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিটি কাসে এবং উচ্চ শিার প্রতিটি সেমিস্টারে কুরআন-হাদীসের আলোকে নৈতিক ও শিষ্টাচার সম্বলিত কোর্স অন্তর্ভূক্ত করা।

৬. বিভিন্ন মসজিদ, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও এন.জি.ওর মাধ্যমে নৈতিকতা ও শিষ্টাচারসহ ইসলামী সংস্কৃতির উন্নয়ন ও সভ্যতা সম্পর্কিত সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালার আয়োজন করা।

৭.  পাড়া-মহল্লা কেন্দ্রিক কিশোরদের মাঝে নৈতিকতা ও শিষ্টাচারিতার েেত্র পুরস্কারের ব্যবস্থা করা।

৮.  সন্ত্রাসবাদ আর সাম্রাজ্যবাদ ও অধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলন এবং জাতীয় ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদসহ সকল ধরণের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সামষ্টিক সংগ্রামের পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। এ েেত্র  আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ ব্যক্তি, সরকার, ও সরকারের বাইরে সকলকে একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

৯.  à¦¸à¦•à¦² ধরণের মিডিয়ায় মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা থেকে বিরত থাকা। সন্ত্রাসী যে দল, মত বা পথেরই হোক না কেন, তাকে সন্ত্রাসী হিসেবেই চিহ্নিত করে প্রচারণা চালানো। পাশাপাশি নৈতিক আদর্শের প্রচারণা চালিয়ে যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধ করা।

১০. মানবাধিকার সংগঠনগুলো অত্যন্ত সচেতন হওয়া। যে সকল সন্ত্রাসী নিরপরাধ মানুষের অধিকারকে প্রতিনিয়ত ুণœ করছে; মানবাধিকারের নামে সেই সন্ত্রাসীদের সাফাই গাওয়া যেন না হয় সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা।

১১. বর্তমান সময়ে যে সকল ছাত্র ও যুব সংগঠন আইন শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর নাকের ডগায় প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করে সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। শিাঙ্গনে আধিপত্য বিস্তার, গ্র“পিং এবং টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলের জন্য যে অরাজকতা সৃষ্টি করছে, তার বিরুদ্ধে সরকার, প্রশাসন, মিডিয়া তথা সকলকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া।

১২. অপসংস্কৃতির বেড়াজাল ছিন্ন করে সুস্থ-সামাজিক ইসলামী সংস্কৃতি ও বিনোদনের ব্যাপক চর্চা নিশ্চিত করা।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।